|
Poetry in Bengali/বাংলা কবিতা
Rassel Ahmed
Kalikrishna Guha
Sardar Faruque
Suman Dhara Sharma
Naznin Seamon
Munib Rezwan
Prang Basak
Subir Sarkar
Robiul Manik
Kawsary Malek Rosy
Hassanal Abdullah
|
|
রাসেল আহমেদ
বিপ্লব এবং কয়েদী
লোহার গরাদগুলি খুব বেশী উঁচু নয়, বড়জোর দু’মানুষ─
আধমানুষ ফাঁকা; হাত বাড়ানো যায় সন্তর্পণে
সিগারেট যদি মিলে যায়; দু’চার শলাকা মিলেও যায়।
মুদ্রার শব্দে পানীয়ও মেলে─জিভে কড়া
কিন্তু মস্তিষ্কে খুব ঝড়
যেমন করে গুটলি গুটলি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন এবং আবছা হয়
বাতাস─মাথা ঝিমঝিম করে, চোখ সামান্য নেশাতুর
অবিকল তেমনি প্রিয়জনেরা এসে ভিড় করে
প্রেতের মত─
খুব বেশী দূরে নয়, পড়ে থাকে গার্ডের একজোড়া পাম্পশ্যু
পাক খেয়ে উঠে আসে মোজা খোলার পরবর্তী ঘ্রাণ;
কয়েদীকে ফেলে রেখে গেছে তারা
নিষিদ্ধ সম্ভোগে...
ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে দিনে যেই উত্তপ্ত রোদটুকু আসে
কয়েদী সে রোদটুকু পিঠ দিয়ে শুষে নেয়
হাতের আঙুল দিয়ে,
নখ দিয়ে শুষে নেয়;
অবশিষ্টটুকু তার জিভ দিয়ে─
মনে হয় প্রিয়জন উঁকি মেরে আছে।
খুব প্রিয় প্রিয়জন, ঘ্রাণ পায়, অথচ সে কিংবা তারা
দেয়ালের বাইরের দেশে।
এপাশের পৃথিবী যতটা নিষিদ্ধ ওপাশের দৃশ্যপট
ততখানি রহস্যময়; এখানে দেয়ালজুড়ে চকের আঁকিবুকি
এবং কয়লার দাগ
(এককালে হীরে হোত─ভেবে খুব একচোট হাসি হেসে নেয়)
ঘনকের এককোণে প্রসাবের কটু গন্ধ,
বমির দাগ (এটুকু তার নিজের),
মলের শুকনো দাগ...
সম্ভোগ শেষ হলে গার্ড ফিরে আসে─
সাহেবের উচ্ছিষ্টেই তার একটু বিশেষ ভক্তি;
তার হাতে রেডিওর গুনগুন-আলো
সেখানে দেখতে পায় কয়েদী মিছিলের শুকনো খবর
সেখানে দেখতে পায় মিছিলের মুখগুলি রক্ত বিকিয়েছে
খুব সস্তায়
সেখানে দেখতে পায় মিছিলের মানুষের নিম্নপোশাক।
ফেলে রাখা পাম্পশ্যু ধীরে ধীরে পায়ে গলায়
চাকরিজীবী গার্ড
পায়ের তলায় সেই মিছিলের মুখ;
কয়েদী দেয়ালে রাখে পিঠ, সন্তর্পণে চোখ বোজে...
ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে তখনো চাঁদের ম্লান আলো
আসে, বাল্বের সাথে মিশে যায়;
চ্যাপা শুঁটকির মত বালিশে একটা উঁকুন আর
মৃত তেলাপোকা
কয়েদীর এইমাত্র মৃত পড়ে থাকা দেহের সাথে তাদের
সামান্য পার্থক্যও নেই!
হুইল চেয়ার
তখন তিনি সন্তর্পণে বসলেন
চেয়ারে মানুষের মত দু’টি পা
এবং গাড়ির মত চাকা
সামনে একটা কাগজ আর কাঠপেন্সিল
তিনি লিখতে শুরু করলেন।
প্রথমে লিখলেন, ‘ভালো থেকো।’
তারপর, ‘কেমন আছো?’
─কোন সম্বোধন নেই।
কাগজের টুকরাটি একটি খামে ভরে
মুখভর্তি দাড়িঅলা চাকরকে ডাকলেন,
‘বক্সে ফেলে আয়।’
প্রেরক কিংবা প্রাপকের কোন নাম কিংবা
ঠিকানা নেই।
আমি তার খুব কাছে আসলাম
কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কার কাছে লিখলেন?’
অল্পক্ষণ নীরবতা, তারপর
চোখ ঘষে বললেন,
‘হুইল চেয়ারের কাছে।’
বললাম, ‘আমি ভেবেছিলাম দেশের কাছে─’
সত্যি তাই ভেবেছিলাম।
তিনি আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন।
আমি কান চেপে তার হাসি থামার
অপেক্ষায় রইলাম...
কতদিন
কতদিন...
মনে আছে, কতদিন?
কতদিন চোখ নেমে যায় আলগোছে
দেখা হলে
বুড়ো আঙুলের মাটির শরীর জুড়ে ব্যথা;
মনে আছে?
কতদিন আমরা অন্ধ
তোমার চোখের মাঝখানে কাজলের বদলে
ঢেকিছাঁটা চাল
আমার চোখে সুরমার বদলে
ধূলোবালি আর মরুভূমি
মনে আছে? কতদিন...
আর কতদিন আমাদের দুই চোখে
ভালোবাসার বদলে খেলা করবে
দু’মুঠো ভাতের জন্য লোভের কানামাছি?
কতদিন...
ঢাকা
|
|