Shabdaguchha: Logo_new edited by: Hassanal Abdullah issue: 71/72




Contributors:


Poets and Translators:


Dariusz Thomasz Lebioda
Nino Provenzano Fuad Atal
Peter Thabit Jones
Joan Digby
Kristine Doll
John Digby
Carolyn Mary Kleefeld
Richard Jeffrey Newman
Bishnupada Ray
Dileep Jhaveri
J. Scotte Barkan
Shokrana Sarkar
Rachel Mejia
Baitullah Quaderee
Motin Raihan
Dilara Hafiz
Anisur Rahman Apu
Roni Adhikari
Jasim Uddin Tutul
Hassanal Abdullah


A Tribute To


Shaheed Quaderi (1942-2016)
Syed Shamsul Huq (1935-2016)
Rafiq Azad (1943-2016)


Book Review


Nicholas Birns


Letters to the Editor


Stanley H. Barkan
Nirmalendu Goon
Belal Beg
Tomasz Marek Sobieraj
Naznin Seamon
Bishnupada Ray
Sk Kamrul Hashan
Hasan Ali
Firoz Ashraf
Ariful Islam
Shahab Ahmed Taher Ahmed Razu Rahul Roychowdhury Momin Mahadi Khondkar Khosru Parvez Roni Adhikari


Cover Art:

Al Noman


New Logo:

Najib Tareque





    বায়তুল্লাহ্ কাদেরী
    
    পক্ষিগোত্র-২
    
    এই যে আমাকে খুব দেখছেন গাছের ভিতরে 
    জলে ডোবা কুমিরের মতো
    দেখছেন শুয়ে আছি, দেখছেন 
    আমাকে আপনি, আপনারা হগলতেই দেখছেন
    আমি শুয়ে আছি এই গাঁয়ে—
    কোত্থেকে এসেছি? হুতুম পেঁচার দেশে 
    কীভাবে এসেছি 
    কোন রক্তে পলি আর জ্যোৎস্না খেয়ে 
    রমণী বিড়ম্বনায় ভালবেসে আমি 
    এখানে বিরাটকায় বপু ব্যতিক্রমী 
    চশমাচুরুটচুল পাঞ্জাবি কালো পেঙ্গুইন, পাজামার বহর,
    কণ্ঠভেজা-ভাটিয়ালি দেখুন তর্জনি... 
    ভেবেছেন একবারও কোত্থেকে এসেছি? 
    পক্ষীদের দেশে আমি কীভাবে এসেছি?
    যেখানে রবীন্দ্রবাবু নেই, যেখানে মাস্টার-দা ভিজে গেছেন 
    যেখানে ঝাঁসির রানী, বহু ক্ষুদিরাম আরো 
    ক্ষুদে হতে থাকেন পক্ষীর গোত্রে, যেহেতু রয়েছে নদী
    যেহেতু ফাগুন বেলা...যেহেতু নৃবংশ 
    জোর দাবি করে বসে অ আ ই ঈ
    আমাকে আসতেই হলো ভাসতেই হলো পক্ষী গোত্রে
    একটি উদাম জাতির আব্র“ খুঁজতে খুঁজতে 
    আমাকে সাঁতরাতেই হলো যম দস্যুর সমুদ্দর। 
    তথাপি যে জাতি খেয়ে ফেলেছে নিজের ডিম,
    যে নিজের ডালে বসে আরামসে কেটে ফেলে 
    নিজেরই ডাল, অকারণে পুচ্ছ তুলে হঠাৎ দেখিয়ে 
    ফেলে নোংরা পায়ুদেশ
    অতঃপর সে হনহনে দিশেহারা হয়ে ওঠে 
    অথবা ভীষণ উড়াল পাড়তে চায়
    অথবা দাবায়া দিবার চায় বপুর পরিচয়
    ভেবেছেন আমি কীভাবে শুয়েছি? উত্তর-দক্ষিণে?
    কোনাকুনি তেরছা শুয়েছি? শুয়েছি আবোল তাবোল? 
    হা, এই তো ছিলাম আমি 
    পাখির সংসারে লাঙলের ধারে-ধরা শীত
    আর সারসের থির হয়ে থাকা স্থিরবিন্দুটির কাছে
    দেখুন পড়েছে রক্ত! ভেবে দেখেছেন কার রক্ত?
    আপনার, আমার, না বরফের?
    
    
    বিভাসা একটি নাম 
    
    বিভাসা একটি নাম—ছিল একদা বৃষ্টিমুখর
    অতীতের মৃদু ঝোলে, পিয়াসায়, ছিল লো-ভল্যুমে,
    যখন শুনছি গান বেলে-জোছনায় উদুম্বর 
    গাছের ভিতরে জীবনের জায়মান পেন্ডালুমে।
    অথবা বিভাসা বর্ষাজন্মা গাঢ় উদ্ভিদের মতো 
    আকাশ ছাড়িয়ে উঠে যায়, ঘনালয়ে মেঘমালা
    যেমনি অস্থিরমতি—বিভাসা সে'রাম। অতিদ্রুত 
    পলায়নপর বিভাসায় বৃষ্টিচাতকীর জ্বালা।
    বৃষ্টির লাগুর তবু পায় কি বিভাসা? পায় নাকি 
    সনেটের কানপাশা কিছু? অহমের হিমভরা
    জলাশয়ে শুভ্র হংসিনীর মত ভাসে কি সুন্দরা? 
    সে সব বহুত প্রশ্ন, বহু জিজ্ঞাসার দম-ভরা 
    বোতলে বন্দিনী সে বিভাসা। এখনও শব্দসন্তরা
    বিভাসাকে খোঁজে: তার নাম রাখে দূর শুয়াপাখি ।
    
    
    সন্ধি হবে বলেছিলে
    
    সন্ধি হবে বলেছিলে, যদি বৃষ্টি এসে করিডোরে 
    আচমকা তোমাকে খামচে ধরে; বায়ুত্রাস অহরহ
    শাড়িটি নিংড়াতে শুরু করে, বলেছিলে অর্থবহ
    নিগূঢ় সন্ধির দিকে যাবে তুমি: নিশ্চিত সিডরে।
    বাহুবল অতিতুচ্ছ সামন্ত-চিন্তার রুচি ধরে
    বলে ওতে সায় নেই। তাই বলেছিলে সন্ধি হবে
    এ বৃষ্টিমুখরতায়, বাতাসের স্নেহের আহবে
    সন্ধির প্রদীপ নিজ হাতে জ্বালবে শব্দের ঘরে ।
    করিডোরব্যাপী ঘোরবৃষ্টি। বায়ুত্রাসে তব শাড়ি
    থুবড়ানো কাক। তোমার সন্ধির স্নিগ্ধ গন্ধরাজ 
    হৃদয়ে বাড়ায় ঝোপঝাড়; মেলে ধরে পাখোয়াজ।
    ফ্ল্যাটের নিঃসঙ্গ ওঝা তবে কেন করে বাড়াবাড়ি
    আমার এ হলাহল নিয়ে? কেন সন্ধিহীন সিঁড়ি
    থমকে দেয় বলো, অন্তহীন এই বৃষ্টির মিরাজ!
    
    
    ধ্রুব হয়ে এসেছি জলৌকা
    
    ধ্রুব হয়ে এসেছি জলৌকা,
    শূন্যতার ম্যাক্সি-পরিহিতা জলবায়ু 
    উপরস্থিত হে স্থবিরতা, ধ্রুব থেকে অতিধ্রুব 
    এমন অহমপরিবৃত্তা মেঘা কি আমার 
    পরিচয় জানে? জানে, আমি সেই 
    মাথাভাঙা উদুম্বর গাছ, যার নিচে 
    সুদীর্ঘ চুলের চিল আজও
    সম্ভ্রম হারিয়ে বসে? নিষেধের যাবতীয় 
    হাটবাজার সর্পিণী এবং খসে পড়া আব্র“ 
    তোরঙ্গের মতো কুঁজো পাথরে রূপান্তরিত? 
    তাহলে এমন কেন? দুঃখবিলাসীর মতো
    কেন কাল মহাকাল বিচারকের মূঢ়তায়—হৃদয় 
    আছড়ে পড়ে, আমার হৃদয় আছড়ে পড়ে শুধু
    পলির পাথরে!
    
    ঢাকা
    
    
    
    
    ---
    
    মতিন রায়হান
    
    তোমরা সবাই কেমন আছো
    
    ইস্কুলবাড়ির বটের তলা ক্লাসরুমের নড়বড়ে বেঞ্চ
    চক-ডাস্টার প্রিয় ব্ল্যাকবোর্ড
    তোমরা সবাই কেমন আছো?
    কেমন আছো পড়শিবাড়ির ঝুমকো জবা
    পুকুরঘাটের শেওলাধরা পিছল সিঁড়ি
    শেওড়াগাছের ভূত-ভূতানি?
    দাড়িয়াবাঁধা কানামাছি গোল্লাছুটের ছেলেবেলা 
    এক্কাদোক্কা বাঁশের সাঁকো জমিয়ে-থাকা কিশোরবেলা
    তোমরা সবাই কেমন আছো?
    মটরশুঁটি পুড়িয়ে খাবার নাড়ার আগুন
    বেতস ঝোপে লতিয়ে ওঠা থোকা থোকা পাকা বেথুন
    ধানকুড়ানি সাথি আমার জংলি ডাহুক
    তোমরা সবাই কেমন আছো?
    কেমন আছো চিঁচিঁ-ডাকা হাঁসের বাচ্চা, শামুক-ঝিনুক
    জলমেশানো ধানের কুঁড়া, খই-মুড়িরা
    তোমরা সবাই কেমন আছো? 
    কেমন আছো বাঁশের ঝাড়ে ঝুলে থাকা কলাবাদুড়
    শঙ্খধ্বনি সন্ধ্যাপুজো সিঁথির সিঁদুর
    দিঘির জলে ঝুঁকে থাকা কৎবেল গাছ
    তিলাঘুঘু ধানশালিক আর কুটুমপাখি
    তোমরা সবাই কেমন আছো?
    
    আমি কেমন?
    মন ভালো নেই, মন ভালো নেই, মন ভালো নেই...।
    
    
    
    নদী বিষয়ক
    
    নদীরা সমুদ্রে গেলে কোনো কথা নেই
    মিলনসুষমা দেখে তৃপ্ত হয় চোখ
    যদিও জলবাজি তীরে তীরে বাড়ায় অসুখ!
    
    নদীরা হারিয়ে গেলে সবুজ শিশুরা শুধু কাঁদে
    কান্নার আগুনে জ্বলে ধিকিধিকি সমুদয় স্মৃতি
    কথা নয়, মুখ বুজে পড়ে থাকে দিকচিহ্ন, কিছুটা উদ্ধৃতি!
    
    
    
    পার্থক্য
    
    আমি যদি সন্তর্পণে বর্ষণের কথা বলি
    তুমি চৈত্র থেকে তুলে আনো চান্দি-জ্বলা রোদ
    তখন অস্তিত্ব নিয়ে জাগে শঙ্কা, আচানক বোধ! 
    
    আমি যখন নদীর কাছে সবুজ বাতাসের কথা পাড়ি
    তুমি তখন লোকালয়ে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় তোলো
    কাঁপাও বসতি বৃক্ষ খুব এলোমেলো! 
    
    আমার প্রাণের কাছে শেষতক তুমি ধরা দিলে
    ধু-ধু দিগন্ত ছাড়িয়ে বেদনার সীমাহীন নীলে!
    
    ঢাকা
    
    
    
    ---
    
    দিলারা হাফিজ
    
    স্মৃতি
    
    ঐ দিগন্তরেখা ধরে দু'জনে হেঁটেছি কতোদিন
    মনে কী তোমার পড়ে ঘাসবনে শুয়ে শুয়ে একা;
    কতো দীর্ঘপথে যেতে যেতে উষ্ণ হাতে কতোবার
    রেখেছি আমার দুই হাত যেনো অনন্ত অসীমে
    ছুঁয়েছি আপন মনে তৃষ্ণার অমৃত কুম্ভজল;
    মনে কী তোমার পড়ে এইবেলা শুয়ে শুয়ে একা!
    
    স্পর্শের অতীত এক শ্যামল সবুজ মায়ালোকে
    দু'জনে ছিলাম এতোকাল যেনো পঞ্চবটিবনে,
    তুমি ছিলে অকৃত্রিম বন্ধু আনন্দের উৎসলোক।
    মনে কী তোমার পড়ে একা শুয়ে অলস দুপুরে?
    
    চেয়েছো বিজন ভারাতুর গৃহ সদা অনাবিল
    সন্তান-আনন্দে ছিলে সারাবেলা আকণ্ঠ নিমগ্ন
    যেনো স্নেহে অন্ধ পিতা পৌরাণিক ধৃতরাষ্ট্র এক;
    মনে কী তোমার পড়ে ঘাসবনে শুয়ে শুয়ে একা?
    
    ঋদ্ধ পানাহারে ছিলে তুমি মত্ত দাদুরীর প্রায়,
    শিল্পের বীক্ষণে মির্জা গালিব অথবা ভর্তৃহরি
    কখনো আবার বোদলেয়ার তোমার প্রিয় অতি;
    মনে কী তোমার পড়ে একা শুয়ে গভীর রাত্রিতে?
    
    সংসারে বৈষ্ণব ছিলে ঋষির অধিক সন্ত ঋষি
    শিল্পের সারথি এক তপোবনে তৃষ্ণার্ত চাতক
    অসামান্য শব্দকারিগর তুমি অনন্য তাপস।
    মনে কী তোমার পড়ে আর সেইসব রাত্রি দিন? 
    
    এখন আমার রাত্রিদিন তুমিহীন জলাশয়;
    হারিয়ে বৈভব বিভা শান্ত জলস্রোতহীন একা।
    স্মৃতির প্রবাহ মিছে, মিছে কর্ম, সত্য-মিথ্যা জ্ঞান...।
    
    ঢাকা
    
    
    
    ---
    
    আনিসুর রহমান অপু
    
    প্রণয়ের প্রত্মরেখা
    
    বলিনি কখনো উচ্চারণে কলমে বা কবিতায়
    তাল লয় সুরের সোহাগে সুগন্ধি-সন্ধ্যার স্মৃতি—
    হিরন্ময় আদর ভাস্কর্য; বিমূর্ত রাত্রির রোদ
    গভীরের স্থাপত্যে খোদাই হয়ে আছে অনশ্বর,
    তোমার তুমুল উপস্থিতি ভিন্নতর ব্যঞ্জনায়—
    সময়ের দাহে পুড়ে যেতে যেতে রয়ে গেছে প্রীতি,
    প্রণয়ের প্রত্মরেখা—রয়ে গেছে লাল নীল বোধ।
    
    পলকে পাল্টায় দিন, পৃথিবীরো নতুন পালক 
    বয়সন্ধিবাহী নদী খুঁজেছে নির্ভরতার নীড়,
    রক্তাক্ত হৃদয় আর একাকী আকাশ মুখোমুখি—
    অজান্তে কখনো তুলে আনে যাপিত ব্যথার স্বর,
    চালচুলোহীন চাঁদ মেনেছে চূড়ান্ত হেমলক—
    তবু ভালো থেকো প্রেম—নিরন্তর নয়নের নীর—
    ক্ষরণে বরণে সদা সুখে থেকো—চারু চন্দ্রমুখী।
    
    
    
    নাই করে দেয় সব
    
    সে-ছিলো ভয়াল বিভীষিকা, শ্বাপদ শাসিত দিন—
    শঙ্কিত মানচিত্রের প্রতিকোণ—প্রতিটি মানুষ;
    দুর্বৃত্তের ধর্মতাসে ফাঁসে গরিষ্ঠের অধিকার—
    আর ন্যায্য দাবী সাধারণ; চাবি মেরে তর্ক-যুক্তি
    ন্যায়নীতি বোধ, ষণ্ড খোদ ভাঙে বিশ্বাসের ঋণ;
    ক্ষমতার রঙিন নেশায় হায়েনা হারায় হুঁশ—
    যদিও প্রত্যাশা-প্রতিশ্র“তি বুনেছিলো শানদার।
    
    সবুজের সাম্যশক্তি, আপামর মুষ্ঠিবদ্ধ হাত 
    ভেঙেছিলো শোষণ প্রাচীর আর ব্যাপক বঞ্চনা
    লক্ষ প্রাণ, জায়া-জননীর সম্ভ্রম ও রক্ত-ঘামে 
    যে পতাকা সেখানে আবার শকুনের অন্তর্ভুক্তি,
    মৃত্যুচুক্তি—হানাদার অগণন, আঁধারের দাঁত—
    পেষে সমস্ত অর্জন—অহর্নিশ একক বন্দনা 
    নাই করে দেয় সব—কিনেছি যা সর্বস্বের দামে। 
    
    
    
    যীশুর যন্ত্রণা 
    
    যেভাবে নাচাতে চাও—নাচেনি পুতুল, আঙুলের
    ইশারায় যদিও সর্বস্ব লেখো নিজের দখলে—
    কোণঠাসা কবিতার মাঠ, নৈমিত্তিক নষ্টপাঠ
    দিয়েছো দস্তুর, প্রতি অণুকণা রেখেছি হিসাব—
    প্রতিদিন নাই হয়ে যায় অগণন মানুষের
    পরিজন, বিভীষণ বিশ্বাসের উদার আঁচলে 
    বোনে কাঁটাতার, চাঁদে চাটুকার গোণে কড়িকাঠ;
    
    জুডাসেরা বুঝবে না ক্রুশবিদ্ধ যীশুর যন্ত্রণা,
    রুদ্ধশ্বাস প্রেক্ষাপট; সর্বগ্রাসী হায়েনায় মন
    দিয়েছে দানব দৃঢ়, সাথে আরো কিনেছে কুর্নিশ
    সবিস্তার শর্তহীন মেরুদণ্ড, কালের কিতাব
    শুনেছে জনারণ্যের আর্তনাদ; কৌটিল্য মন্ত্রণা 
    বন্দনা-বিস্তৃতি তবু দেয় তাকে জ্ঞানী পাঁঠাগণ—
    বাতাসে বিস্তর বুনেছেন যিনি বিভক্তির বিষ!
    
    
    
    সুনন্দ সান্নিধ্য ছোঁয়া
    
    স্নিগ্ধা তোমাতে তুমুল, তৃণমূল প্রেম—প্রেরণার;
    স্যাম্পেনের বুদ্বুদের মতো সুনন্দ সান্নিধ্য ছোঁয়া 
    বিশ্বাস ও ভরসার সবটুকুন বিহঙ্গপথ—
    নীলের থেকেও নীল—প্রান্তরের বুকফাঁটা ধূ ধূ
    কষ্টে টানো পাশে, অনায়াসে দুখ-সুখ বেদনার
    হিস্যা নাও। রাত্রির নৈসঙ্গে—যথার্থ জোছনা ধোয়া
    উষ্ণতার চাষে জোড়া পূর্ণিমার প্রভা—মতামত
    
    রেখে যায় অন্তানন্দে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে বুনে যায় সুখ-
    সম্মাননা, শিশিরের ঘ্রাণ মেখে হ্রস্ব হ্রদ, নদী
    ডেকে নেয় সাগর সঙ্গমে, অবগাহনের স্রোতে
    আনে শিল্পের সুষমা—আনন্দ ভৈরবী রাগে, শুধু
    প্রীতি; বারো চাঁদ, তেরো তিথি অমাবস্যা—ভুলচুক
    শুধরে পাথুরে প্রহরেও প্রাণ-প্রাচূর্য; ওষধি-
    জীবন—ভালোবাসায় ভরে দাও শুদ্ধতর ব্রতে।
    
    
    
    যেনো মিলে যায়
    
    আমাদের গল্পটা কোথাও না কোথাও যেনো মিলে
    যায়, মিলে যায় বঞ্চনার বেলাভূমি, যন্ত্রণার 
    জন্মদাগ। ক্ষরণের লালরঙ, বেদনার নীল—
    তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পর্ক সোপান লাভ-
    ক্ষতির হলুদ অজগর হা-মুখে হঠাৎ গিলে 
    নেয়; 'সৎ' শিরোনামে তুলে আনা পিতৃ উপহার
    যুগান্তরের যন্ত্রণা—আগামীর দ্বারে আঁটে খিল
    
    দু'জনার দাহ, রাগ-ক্ষোভ, সংবিধান, সংবেদন 
    চোরাবালিতে আটকে পড়া অবদমিত বসন্ত,
    সুড়ঙ্গের ভেতর জীবন সেঁধিয়ে আমরা রোজ
    অপেক্ষার গোছাই পালক। সুদিনের বুনি খাব,
    সুহৃদ-স্বজন-সহোদর বোঝেনি অর্ন্তকথন 
    রাখেনি কথা ও কাজে মিল—ভেবেছি যাদের সন্ত;
    বিড়ম্বনার সংসারে সঙ সেজে তবু দিই পোজ।
    
    
    নিউইয়র্ক
    
    
    
    
    ---
    
    
    রনি অধিকারী
    
    লোকালয় ছেড়ে একদিন
    
    ১
    লোকালয় ছেড়ে চলে যেতে হবে নির্জন প্রান্তিকে
    ঢেকে রাখা ক্ষত, শোকার্ত শরীর, প্রতীক্ষার নীল জলে হেঁটে।
    
    ব্যর্থতার বিবর্ণ উঠোনে আগুন বেঁধেছে বাসা...
    লোকালয় ছেড়ে একদিন ঠিকঠাক চলে যাবো আমি
    জন্মান্ধ ধূসর পৃথিবীর অনঙ্গ আড়ালে।
    
    এইসব জেনে প্রতীক্ষার প্রার্থিত পুরুষ
    অবারিত ঘুমিয়েছে মাঠে,
    মাটি আর শরীরের শুনে শোকার্ত সঙ্কুল জড়াজড়ি...
    
    ছড়িয়েছে আকাশ নীলাভ আস্তরণ,
    রৌদ্র বিছিয়েছে নিঙড়ে নেবার রঙ,
    কুয়াশার অফুরন্ত ছড়াছড়ি।
    
    এভাবে ঘুমিয়ে পৃথিবীর প্রতিটা পুরুষ আর নারী
    অশেষ জেনেছে অবারিত মাঠ আর প্লাবনের ঘাটে
    মিশে আছে স্বাদ কতোটা নিবিড় হয়ে!
    
    ২
    প্রেতের নগর আর প্রবঞ্চনার সিঁড়িতে
    ঝুলে আমার ছায়ারা হেঁটে যায়...
    সূর্যের আড়ালে হেঁটে যাই আমি—
    
    আমি যাই, যেতে হয়,
    পৃথিবীর প্রার্থনায় নিথর নির্জন
    নগ্ন নীরব, নীরবতায়;
    আমি যাই, যেতে হয়।
    
    ঢাকা
    
    
    
    ---
    
    জসিম উদ্দিন টুটুল
    
    একটি বিড়াল
    
    একটি বিড়াল আছে তোমার বাসায়
    কী অপার স্নেহেই না সিক্ত থাকে সেই ভাগ্যবান নিরীহ বিড়াল
    তুলতুলে নরোম শরীরে ঘুর ঘুর করে তোমার পায়ের কাছে
    দারুণ আহ্লাদে, প্রশ্রয়ে কাটায় সারাদিন।
    তুমি বই অথবা চা হাতে দোলচেয়ারে যখন বসো—
    নিরিবিলি ধ্যানমগ্ন অতন্দ্র পাঠক,
    তোমার শাড়ির আঁচল খামচে ধরে টানাটানি করে,
    খুনশুটি আর লুটোপুটি চলে অবিরাম।
    
    তোমার কপট বিরক্তি ও ঠিক বুঝে ফেলে
    সচকিতে সরে যায়, তথাপি আবার ফিরে আসে চুপি চুপি
    জামবাটি থেকে দুধ খায় চুক চুক শব্দ তুলে
    রুটির টুকরো বিস্কুট তোমার হাত থেকে খেয়ে নেয়
    অনায়াসে, সম্পূর্ণ নির্ভয়ে।
    
    মাঝে মাঝে বিড়ালটিকে তুমিও কোলে তুলে নাও
    তোমার বুকের ওপর লেপটে থাকে পরম আদরে, চোখ বুজে ওম নেয়।
    প্রায়শই ওকে নিয়ে ছাদে চলে যাও দৌড়ে
    একসাথে দ্যাখো নীলাকাশ, দ্যাখো পাখিদের
    আমার তখন খুব হিংসে হয়, আমি মানুষ, সহসা
    মাথা কুটে মরি তোমার দুর্ভেদ্য ঘরের দেয়ালে প্রতিদিন
    অথচ পাইনি আজতক তোমার স্পর্শের ছায়া।
    সামান্য বিড়াল ছানা কেড়ে নিলো
    তোমার এতোটা অধিকার!
    
    পরজন্মে তোমার বিড়াল হবো আমি।
    
    ঢাকা
    
    
    
     
    
    
    












Find us on Facebook



Printed Version
পত্রিকার মুদ্রিত কপি



Contents:


Poetry in Translation

Poetry in English

Poetry in Bengali

Poetry Dedicated to Stanley H Barkan

Book Review

Shabda News

Letters to the Editor







শব্দগুচ্ছর এই সংখ্যাটির মুদ্রিত সংস্করণ ডাকযোগে পেতে হলে অনুগ্রহপূর্বক নিচে ক্লিক করে ওয়ার্ডার করুন।

To order for the hardcopy of this issue, please click on the following link:

Get a Hardcopy

Back to Issue 71_72
Back to Front Page Send Your Feedback
Shabdaguchha, an International Bilingual Poetry Magazine, edited by Hassanal Abdullah