Shabdaguchha: Logo





Poetry Dialogue



Trishak Jaldas
Naznin Seamon
Neel Kantho
Khalid Mahmud
Robiul Manik


Back to Issue 49_50
Back to Front Page


On Swatantra Sonnets

স্বতন্ত্র সনেট: কথকতা

[সম্প্রতি রবিউল মানিক, হাসানআল আব্দুল্লাহ'র উদ্ভাবিত স্বতন্ত্র ধারায় সনেট লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিলে এ নিয়ে ঢাকা নিউইয়র্ক জার্মানি সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত কাব্যামোদিরা আলোচনায় জড়িয়ে পড়েন। রবিউল মানিকের অনুমতিক্রমে সেখান থেকে নির্বাচিত অংশ তুলে দেয়া হলো।]

ত্রিশাখ জলদাস: কবিতা নিয়ে যে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা আমার ভালো লাগে। সনেটের এই নতুন ফর্মও আমার ভালো লেগেছে। যিনি এই ফর্মটা এনেছেন তাঁকে আমার অভিনন্দন। মানিক এই চতুর্দশপদী—অন্যরকম—আমার ভালো লেগেছে তবে এই অন্যরকম বলতে কি আপনি এই সনেটের স্বতন্ত্র ফর্মকেই বুঝিয়েছেন? যদি তাই হয় তবে স্বতন্ত্র বা অন্যরকম শব্দটা বাহুল্য মাত্র। সনেট মানে সনেট তাতে অন্যরকম বা স্বতন্ত্র শব্দের প্রয়োজন নেই। শুধু ফর্ম ভাঙ্গার জন্যে এ রকম বাহুল্য শব্দের যদি প্রয়োজন হতো তাহলে বাংলা কবিতা যতবার ফর্ম পরিবর্তন করেছে ততবার এর প্রয়োগ হলে আজকালের কবিতার কি নাম হতো। আপনি অবশ্য বলবেন যে কবিতার সাথেও তো যোগ হয়েছে তিরিশ-উত্তর, আধুনিক, উত্তর আধুনিক ইত্যাদি ইত্যাদি। মানিক এগুলো কালকে বুঝিয়েছে। কবিতার নাম কবিতাই। যাক সেসব কথা, আপনার কবিতা আমার ভালো লেগেছে। শব্দেও আপনি প্রাচীন ও নবীনের মেলবন্ধনের চেষ্টা করেছেন এবং এক্ষেত্রে আপনি মুন্সিয়ানাও দেখিয়েছেন। আপনার এই এক্সপেরিমেন্টটা ভালো, যদি মিশ না খায় তবে পাঠকের নিমজল গেলার মত হবে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত নয় কি?

নাজনীন সীমন (Naznin Seamon): [@ত্রিশাখ জলদাস] This new form was introduced by Hassanal Abdullah. If I understand it correctly, there are three major types of sonnets: 1. The Petrarchan (Italian) Sonnet (Octave and sestes; 8+6), 2. Spenserian Sonnet (mainly, 12 straight lines with an end couplet), 3. The English (Shakespearian) Sonnet (3 interrelated quatrains with an end couplet).
There are poets who have tried different ways maintaining the line and word counts in different languages. Modhushudhon introduced the existing sonnet to Bengali literature.

Now, this "Swatantra Sonnet" is the 1st invented sonnet in Bengali literature that strictly maintain the regulations of sonnet, but the rhyming schemes are different. I believe, as Shakespeare had made sonnet writing easier than the preceding two poets, Hassanal's format also is not only a unique one, but much more comfortable/fluent than the other three types. According to this new form, it's divided into 7-7 stanza and the rhyming scheme is: a b c d a b c e f g d e f g.
This is just my limited understanding of sonnets. I believe there are poets who can explain in more details.

About the naming, if we look carefully, we will see that all three types are named after the inventors for obvious reasons. The poet has named this new form as 'Swatantra Sonnet'; maybe, over the period of time if it gets accepted—it might follow the same path as the previous ones. Though 'poetry' is the identity of poetry, yet we can not undermine the various types. Under the authentic umbrella of poetry, poets will creatively add more branches as a part of continuous experimental effort.

[@রবিউল মানিক] I'm just amazed. I wish you the best in your effort. There's one thing I like to ask though. I believe the name of this format should be kept as it is, since many people are not aware of this new format. ...Keep up the journey.

ত্রিশাখ জলদাস: [@Naznin Seamon]: মনে হয় আপনি আমার কথার মর্মে না গিয়ে অন্য প্রসংগ নিয়ে বেশী আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। মনে হয় আপনি আমার লেখাটা ভাল করে পড়েননি। আমি আবার এখানে একটু টানছি, আপনি একটু লক্ষ্য করুন "কবিতা নিয়ে যেকোন পরীক্ষা নিরীক্ষা আমার ভালো লাগে। সনেটের এই নতুন ফর্মও আমার ভালো লেগেছে। যিনি এই ফর্মটা এনেছেন তাকে আমার অভিনন্দন।" আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন পুরনো ফর্মটি যিনি ভেঙ্গেছেন তাঁকে আমি অভিনন্দন জানিয়েছি। যার যা প্রাপ্য তাঁকে তা দেয়া উচিত। গুনীজনের অবশ্যই সম্মান পাওয়া উচিত। এখানে আপনি সনেটের ইতিবৃত্তের অবতারণা করেছেন তার বিশেষ প্রয়োজন ছিলনা কারণ এই ইতিহাস আমাদের বিতর্কের বিষয় ছিল না। এই ইতিহাস আপনিও যেভাবে মেনে নিয়েছেন আমিও সেভাবে অবহিত। অতএব যে বিষয়ে দু’জনই একমত তাতে তো বিতর্কের অবকাশ নেই। তাহলে কেন এই বিতর্ক? আপনার লেখা পড়ে মনে হলো এর ফর্ম আর নাম নিয়ে এ আলোচনায় জড়িয়েছেন। আমরা আগে ফর্ম নিয়ে আলোচনায় আসি। ফর্ম আসলে কি? ফর্ম হল কবিতার ছন্দের বৈশিষ্ট্য এবং এর পঙ্ক্তি বিন্যাস। যুগ যুগ ধরে কবিরা এই ছন্দের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন ও পঙ্ক্তি বিন্যাসে নতুনত্ব আনতে নিরলস প্রয়াস চালিয়েছেন। ফলে কবিতা কালে কালে পরিবর্তিত হয়ে আজকের এই রূপে এসেছে। কিন্তু কবিরা আজও নিরন্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই চলেছেন কবিতাকে নতুন ভাবে উপস্থাপনের জন্যে। এটা একটা অন্তহীন প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট যিনি লিখেছেন তিনি কি ভার্সাই নগরীতে বসে হুবহু ইউরোপীয় সাহিত্যকে মেপে মেপে সে ফর্মে সনেট লিখেছেন। কবি মধুসূদন দত্ত এ ক্ষেত্রে তাঁর স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন। পরবর্তী কবিরা এ ধারার (মাত্রা ৮+৬=১৪/৬+৮=১৪ ... কোনো কোনো কবি ১৬/১৮ মাত্রা ব্যবহার করেছেন) ক্ষেত্রে (৪+৪=৮)/(৪+২=৬) কেউ কেউ আবার এ বিন্যাসটা ভেঙ্গেছেন আগে পিছে করেছেন তবে ৮/৬ এর মধ্যে রেখেছেন; কেউ কেউ অন্ত্যমিলের সূত্র পরিবর্তন করেছেন। ৮ ও ৬ এর ফর্ম ভাঙ্গেনি। এ ক্ষেত্রে হাসানআল আব্দুল্লাহ এই পঙ্ক্তি বিন্যাস ভেঙ্গে প্রচলিত ফর্মের বাইরে গিয়ে ৭+৭=১৪ করেছেন। অন্ত্যমিলের যে নিয়মটা ভাঙ্গার কথা এখানে দেখা যাচ্ছে সেটা খুব একটা গুরত্ব বহন করে না, কারণ অনেকেই এই নিরীক্ষা করেছেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁর পঙ্ক্তি বিন্যাস ভেঙ্গে প্রচলিত ফর্মের বাইরে যাওয়া। এ জন্যে আমি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি।

এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। আমার বক্তব্য ছিল, ফর্ম ভাঙলেই এর নাম অন্যরকম সনেট বা স্বতন্ত্র সনেট কেন দিতে হবে। সনেট কি কবিতা না? কবিতার ফর্মতো প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। যে পয়ারের মাত্রা না গুণে পয়ারের নির্দিষ্ট ছকে না ফেলে কবিতা লেখা হতো তা বদলাতে বদলাতে আজ বাংলা কবিতা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। পরিবর্তনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তার জন্যে তো কোন কালেই কেউ ভুলেও স্বতন্ত্র কবিতা নাম দেয় নি। কারণ এটা একটা প্রবহমান স্রোত একে স্বতন্ত্র ভাবে চিহ্নিত করা অর্থহীন। সনেটও কবিতা,তাই সনেটও একই স্রোতে প্রবহমান। মানিকের কবিতার একটি চমৎকার উপমায় আপনি মুগ্ধ হয়েছেন। আমাদের দৃষ্টি সেখানে নেয়ায় আমরা আন্দোলিত হয়েছি এই রূপকের বিশাল গভীরতায়। এখন আমাকে একটু পরিস্কার করে দেবেন কি আগের ৭ পঙ্ক্তির সাথে এই ৮ম পঙ্ক্তির সম্পর্কটা কি?... আপনাকে ধন্যবাদ কষ্ট করে এত দীর্ঘ লেখা পড়ার জন্যে। যদি আপনি এ বিষয়ে আরো ব্যাপক আলোচনায় যেতে চান তাতে আমি রাজি আছি। এই ছোট্ট পরিসরে সব আলোচনা করা যায় না। আমরা তখন বড় পরিসরে বিতর্কে যাব আমাদের লেখার মাধ্যমে।

Naznin Seamon: [@ ত্রিশাখ জলদাস] For your kind information, I did not want to engage in to any argument. It would be nice if you kindly don't look at it that way. Since you said "যিনি এই ফর্মটা এনেছেন" [whoever introduced this form], I just wanted to mention the name.

Also, I went over the types of sonnets to respond to your statement: "যদি তাই হয় তবে স্বতন্ত্র বা অন্যরকম শব্দটা বাহুল্য মাত্র" [It is irrelevant to say it Swatantra or different]. I wanted to clarify how the name of different types of sonnets came up.

I totally understood your appreciation to the poet. Besides, I strictly restrict myself from commenting without reading or knowing the topic. So, yes, I have read your comment carefully. I have acknowledged your comment and said "Though 'poetry' is the identity of poetry," as you have said "কবিতার নাম কবিতাই".

I totally understood your appreciation to the poet. Besides, I strictly restrict myself from commenting without reading or knowing the topic. So, yes, I have read your comment carefully. I have acknowledged your comment and said "Though 'poetry' is the identity of poetry," as you have said.

ত্রিশাখ জলদাস: [@Naznin Seamon] বিতর্কে আমারও অনীহা সব সময়। তবে আপনি যে প্রক্রিয়ায় সনেটের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন এখানে (যা অবশ্য এরকম একটি ফোরামে অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন) তাতে আমি খুব বিব্রত বোধ করেছি। বাংলা কবিতার পাঠক একটু বেশী মাত্রায় কৌতুহলী। তারা শুধু কবিতা পাঠ করে না, কবিতার ইতিহাসও কিছু কিছু জানে। এটা মনে হয় আমাদের মনে রাখা উচিত। তাহলে পাঠককে আযাচিত জ্ঞান দানের প্রবণতাটা আমাদের কম থাকতো। আপনার যদি আমাকে এই নতুন ফর্মের স্রষ্টার নাম জানানোর ইচ্ছাটাই বেশী প্রাধান্য পেতো তাহলে আপনি সরাসরি তাঁর নাম বলে দিতে পারতেন; এতো শিবের গীত গাইতেন না। আমি এখনো স্বতন্ত্র বা অন্যরকম সনেট—এ ধরনের অর্থহীন বিভাজনে বিশ্বাস করি না। কেন বিশ্বাস করি না সে বিষয়ে সার্বজনীন ভাবনা স্বল্প পরিসরে উপস্থাপনও করেছি। মেনে নেয়া না নেয়া আপনার ব্যাপার। অন্ধ হলেই তো প্রলয় বন্ধ হয় না।

নীল কণ্ঠ: [‎@ত্রিশাখ জলদাস] আপনার এবং নাজনীন সীমনের মধ্যকার বিতর্কটি আমি পড়লাম। এটা বোধ করি বিশেষ কাউকে ঠিক জ্ঞান দানের উদ্দেশ্যে সীমন করেন নি। আমরা এমন অনেক রয়েছি যারা ব্যাপারটি জানি না বা অনেক কাল দেশের বাইরে। অনেক কিছু জানার সুযোগ থাকে না তারাও কিন্তু আজ জানতে পারলাম কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ সম্পর্কে। সময় নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন—সে জন্য তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। সাহিত্যে কোন নবতরো ধারা প্রবর্তককে স্মরণ রাখা হয় যদি সেই ধারা পরবর্তীতে চর্চিত হয় কিম্বা যুগপদ সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ধন্যাবাদ আপনাকে। আপনার বক্তব্যগুলো নিয়েও দ্বিমত করার কিন্তু সুযোগ নেই।

রবিউল মানিক: [@ত্রিশাখ জলদাস] আপনার কথা মেনে নিয়েই বলছি বাংলা সনেটের জনক মধুসূদন সনেট রচনার ক্ষেত্রে পেট্রার্কান ধারা ABBAABBA CDCDCD বা ABBAABBA CDECDE অনুসরণ করলেও অধিকাংশ সনেটে তিনি ইচ্ছে মতোন তাঁর নিজস্ব আঙ্গিকে অন্ত্যমিল ঘটিয়েছেন। আবার শেক্সপীয়র পেট্রার্কান ধারা এড়িয়ে তাঁর নিজস্ব আঙ্গিক ABABCDCD EFEFGG এনেছেন। আরেক ধারার সনেটে অন্ত্যমিল পাই ABBA CEEC EFFE GG এবং জীবনানন্দীয় কয়েকটি সনেট অইঅ ABA BCB CDC DED EE [টেরসা রিমা] অর্থাৎ শেক্সপীয়র থেকে শুরু করে মধুসূদন, জীবনানন্দ,শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক প্রত্যেকেই সনেট রচনার ক্ষেত্রে স্ব স্ব আঙ্গিকে অন্ত্যমিলের পরির্বতন ঘটিয়েছেন কিন্তু কোন কবিই সনেটের মৌল কাঠামো ৮+৬ স্তবক ভাঙ্গেন নি, তাঁরা কেউ কেউ ৪+৬+৪, ৪+৪+৪+২ কিংবা ৩+৩+৩+৩+২ স্তবকে সনেট লিখেছেন। হাসানআল আব্দুল্লাহ-ই সর্ব প্রথম সনেটের মৌল কাঠামো ভেঙ্গে সপ্তক-সপ্তক স্তবকে নতুন একটি ধারা বাংলা কিংবা বিশ্ব কবিতায় সংযোজন করেছেন। সে হিসেবে 'স্বতন্ত্র সনেট' নামকরণ যথোপযুক্ত বলে আমি মনে করি। আমি তাঁর লেখা 'স্বতন্ত্র সনেট' (যাতে ১৩০টি সনেট অন্তর্ভূক্ত) গ্রন্থখানা পড়ে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তাঁর ফর্ম অনুসরণ করে লেখা শুরু করেছি। কবিতা কি হচ্ছে তা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি আশা করছি আমার ব্যাখ্যার কারণে আপনার ও নাজনীন সীমন-এর অনাকাঙ্খিত বিতর্কের ইতি ঘটবে।

নাজনীন সীমন: [@ত্রিশাখ জলদাস] কবিতায় ভাষা বিন্যাস, ছন্দের ব্যবহার ইত্যাদির সাথে ফর্ম বা আঙ্গিকের একটি পার্থক্য আছে তা সম্ভবত আমরা সবাই মানি। সেই অর্থে সনেট একটি ফর্ম যা মূলত ৮+৬=১৪ লাইনে লেখা হয়। তবে আদি সনেট, পেট্রার্ক কিম্বা শেক্সপীয়রের সনেট, যে ছন্দে লেখা হয়েছে তা হলো আয়াম্বিক পেন্টামিটার, অনেকটাই আমাদের স্বরবৃত্তের পাঁচ পার্বিক লাইনের মতো। কিন্তু মধুসূদন দত্ত সনেট লেখেন অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আট+ছয় এর চালে। রোমান্টিক যুগেও আট+ছয় চালে সনেট লেখা হয়, তবে অঙ্গিকের ক্ষেত্রে পের্ট্রাক ও শেক্সপীয়রকেই অনুসরণ করা হয়। পরবর্তীতে আট+দশ এর চালে সনেট লেখা শুরু হয়। এ কথা সত্য যে জীবনানন্দ আট+আট+ছয়=বাইশ মাত্রার সনেটও লিখেছেন। কিন্তু সেতো সম্পূর্ণ ছন্দ ব্যবহারের ব্যাপার। আঙ্গিক ভাঙ্গেননি। লক্ষ্য করলে দেখবেন হাসানআল আব্দুল্লাহ’র সনেট বা ‘স্বতন্ত্র সনেট’ও আট+দশ=আঠারো মাত্রায় লেখা; কিন্তু একই সাথে তিনি আঙ্গিকও ভেঙ্গেছেন। স্তবক বিন্যাসে আট-ছয় না রেখে সাত-সাত করেছেন তিনি। অন্ত্যমিলও সম্পূর্ণ আলাদা: ধনপফধনপ বভমফবভম। আপনি ছন্দ ও আঙ্গিক গুলিয়ে ফেলেছেন, আমি এখানে সেটাই পরিষ্কার করতে চাইছি। আপনার সাথে এ বিষয়ে আরো আলোচনা হতে পারে কিন্তু তার আগে অনুরোধ করবো ‘স্বতন্ত্র সনেট’ বইটি পড়ে নিতে। নতুবা এই আলোচনা অন্ধের হাতি দর্শনে পর্যবসিত হবে।

খলিল মাহমুদ: সনেটের বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিতর্ক ভালো লাগছিল। তবে মূল বৈশিষ্ট্য তো শুধু এসব ফর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। ফর্মই যদি হতো, তাহলে এটাকে ভেঙে ২/৪/২/২/৪, ৪/২/২/৩/৩, ইত্যাদি স্ট্যানজায় কখগঘঙ/ঙঘগখক/চচ/ছছ, ককখখগগ/গগখখকক/ঘঘ এরূপ অন্ত্যমিল সম্পন্ন অসংখ্য কম্বিনেশন করা যেতো; এমনকি অমিত্রাক্ষর ছন্দও স্বতন্ত্র একটা ফর্ম হতে পারতো। পেট্রার্ক, শেক্সপীয়র ও স্পেনসারিয়ান সনেটের অন্ত্যমিলের মধ্যে ভেরিয়েশন যে খুব বেশি তাও না। আর মাত্র ১৪ লাইনের মধ্যে অন্ত্যমিল ও স্ট্যানজা বিভাজনে খুব বেশি ভেরিয়েশন আনার সুযোগও নেই। কিন্তু এরূপ অন্ত্যমিল ও স্ট্যানজা বিভাজনই যদি সনেটের মূল বৈশিষ্ট্য হতো, তাহলে মনে হয় আমরা সবাই দু-একটা ফর্মের প্রবর্তক; কেননা, এরূপ ১৪ লাইনের কবিতা অনেকেই হয়তো লিখেছেন, এখন মিলিয়ে দেখলে অবাক হতে পারেন ওটাও হয়তো একটা স্বতন্ত্র ফর্মে পড়ে গেছে! আমার মনে হয়, ১৪ লাইনের কবিতাটি সনেট কিনা তা নির্ভর করে সুনির্দিষ্ট উপায়ে বক্তব্য স্থাপনা, বিস্তৃতি আর উপসংহারে। ...অন্ত্যমিলে ভেরিয়েশন এনে বিভিন্ন স্ট্যানজায় ভাগ করা মনে হয় ততোটা গুরুত্বপূর্ণ না, যদি না সনেটের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
এখন কেউ যদি ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ বা ১৯/২০ লাইনের কবিতা লেখেন যাতে ১০, ১১, বা অনুরূপ সংখ্যক অক্ষর রয়েছে, আর দাবি করেন এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ফর্মের সনেট, তাঁকে নতুন প্রবর্তকের কৃতিত্ব দিতে হবে। সনেট হলো সংক্ষিপ্ত ধরণের গান, যা গাওয়া বা আবৃত্তি করা হতো বলে ধারণা করা হয়। (বাংলায় চতুর্দশপদী বা অষ্টাদশপদীর কথা বলছি না)। কেউ যদি বলেন, এতে সনেটের প্রচলিত রীতি অনুসৃত হয় নি, তাহলে বলবো প্রচলিত রীতি অনুসরণ করলে তো সেটাকে ভেঙে স্বতন্ত্র ফর্ম তৈরির অবকাশই থাকে না। এজন্য আমার মনে হয়, শিরোনামের সাথে 'অন্য রকম' শব্দযোজন অপ্রয়োজনীয়। আমাদের প্রত্যেকের প্রতিটা কবিতাই অন্যান্য কবিদের কবিতা ও নিজেদের অন্যান্য কবিতা থেকে কোনো না কোনোভাবে আলাদা, কিন্তু সব কবিতার সাথে 'অন্য রকম' লিখবার প্রয়োজন পড়ে না। কবিতাটি সনেট, নাকি সাধারণ গীতিকাব্য, নাকি অণুকাব্য, এসবের উল্লেখও নি®প্রয়োজন। পাঠকের যদি বিভিন্ন কবিতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা থাকে, পঠিত কবিতাটি নিজে থেকেই বলে দেবে, ওটা প্রেমরস, নাকি সোমরসে পূর্ণ কবিতা; সনেট, নাকি অন্য কিছু।

ত্রিশাখ জলদাস: [@নাজনীন সীমন] আগেতো শিবের গীত ছিল।এখনতো দেখি গাজন নৃত্য। এত জোরে তাল বাজছে যে আর্কেমেডিসও লজ্জা পেয়ে যেতে পারে। আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তা মনে হয় বুঝতে পারেননি, প্লিজ এখানে খলিল মাহমুদ যে মতামতটা রেখেছেন তা একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন। তাহলে বুঝতে পারবেন আমি কি বলতে চেয়েছিলাম—তিনি খুবই সাবলীল ভাষায় লিখেছেন। এমন প্রাঞ্জল ভাষা মনে হয় আপনার বুঝতে অসুবিধা হবে না।
আপনি যে ভাবে ঢোল বাজিয়েছেন তাতে আব্দুল্লাহ সাহেবের আবিস্কৃত সনেটের ফর্মটা আমার মাথায় এমন ভাবে গেঁথে গেছে যে এ বিষয়ে আলোচনার সময় ‘স্বতন্ত্র সনেট’ নামক বইয়ের চশমা চোখে না দিলেও চলবে। আর ফর্মের মধ্যে ছন্দের অবস্থান কতটুকু তা যদি বুঝতে না পারেন এবং যদি এটা আরো ক্লিয়ার হতে চান অথবা এ আলোচনা যদি আরো চালিয়ে নিয়ে যেতে চান তাহলে এখানে না, আপনার স্ট্যাটাসে তা লিখে দিন, মুক্ত আলোচনা হবে; আমিতো অংশ নেবোই সাথে আরো অনেকেই অংশ নিতে পারবে।

নাজনীন সীমন: [@ত্রিশাখ জলদাস] 'গাজন নৃত্য' ও আর্কেমেডিসের লজ্জা—সত্যিই লজ্জা দেয়। উপমা মানে কি আবোল তাবোল?
“‘স্বতন্ত্র সনেট’ নামক বইয়ের চশমা চোখে না দিলেও চলবে”—চলবে না; কারণ: ১) তাতে ধান গাছে তক্তা তৈরী হবে ২) অতটা মূল্যহীন সময় আমার অন্ততঃ নেই।
"... মুক্ত আলোচনা" উক্তিটি একটু উপদেশ বলে খটকা লাগল যেন। তাছাড়া আপনার সহন ক্ষমতার যা নমুনা দিলেন—সহমত না হলেই ব্যক্তি আক্রমণ তাতে আপনার সাথে 'মুক্ত আলোচনা' অসম্ভব বলেই মনে হয়েছে আমার। আলোচনা শুনলেই আপনার মনে হবে হয় 'শিবের গীত', বা 'গাজন নৃত্য', বা সবাইকে মনে হবে 'অন্ধ' নয়তো শুনবেন ঢোলের বাড়ি এবং শুরু হবে উপদেশের ফুলঝুরি। তাছাড়া কথা বলতে আলাদা স্ট্যাটাস কেন লাগবে বলুন তো! মানিক তো আপত্তি করেননি, তবে কেন এই বাতুলতা?
'স্বতন্ত্র কবিতা' আর 'স্বতন্ত্র সনেট' কি একই কথা? কবিতার নাম নিয়ে এত সমস্যা, তাহলে এই যে প্রায় পঞ্চাশোধিক নামের কবিতা আছে (এ্যাকরস্টিক, ব্যালাড, ওড, এপিটাফ, মহাকাব্য, এলিজি, গজল, হাইকু ইত্যাদি) এগুলো সব অথর্হীন? সনেট নামেই বা নতুন ধরনের কবিতার কি দরকার ছিল? আর কেনইবা আপত্তি করছেন না সনেটের প্রচলিত ও গৃহীত ধারাগুলো নিয়ে? শুরু থেকে শুরু করাই কি যুক্তিযুক্ত নয়?

আপনি বলেছেন কবিতা কবিতাই, কথা সত্যি; কিন্তু আপনার এড়েতর্ক শুনে প্রশ্ন না করে পারলাম না—সাহিত্য তো সাহিত্যই; তাহলে এত নামকরণ, এত শাখার কি প্রয়োজন? কি দরকার কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ছড়া? কিছু লিখে বললেই তো হয় "আমি না আজ একটা সাহিত্য লিখেছি"। আবারও বলছি আপনি ছন্দ ও আঙ্গিক গুলিয়ে ফেলেছেন।...


Poetry in English ||Poetry in Bengali ||Poetry in Translation ||A Tribute to Aleksey Dayen ||Theory After Theory ||Book Review
Poetry Dialogue ||To the Editor ||Contributors' Bio

Shabdaguchha, an International Bilingual Poetry Journal, edited by Hassanal Abdullah