দু'টি পত্রিকা মূল্যায়ন শাশ্বতিকী Back to Issue 47_48 Back to Front Page |
Issue 47/48 : January - June 2010 : Volume 12 No 3/4 মূল্যায়ন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, মানবতন্ত্রী ও জিজ্ঞাসা পত্রিকা সম্পাদক শিবনারায়ণ রায় ২৬ ফেব্র“য়ারী ২০০৮ সালে শান্তিনিকেতনে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। এই প্রতিভাবান মানুষটি বাংলা মুল্লুক ও বিদেশের অগণিত লেখক সাহিত্যিক সাংবাদিকদের তথা মুক্তমনা সংস্কৃতিবান মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। উত্তর আশিতেও অন্যদের চিঠি লিখতে দেরী হলেও তার চিঠিটা সময় মতো পৌঁছে যেতো। তাঁর মৃত্যুর পর এঁদের অনেকেই স্মৃতিচারণ মূলক প্রবন্ধ নিবন্ধ এবং শিব রায়ের লেখা ওইসব চিঠি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এরকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ, চিঠিপত্র, সাক্ষাৎকারের বিশেষ অংশ এবং তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থের আলোচনা ইত্যাদি নিয়ে কক্সবাজার থেকে বেরুলো মনীষী শিবনারায়ণ রায় স্মারক গ্রন্থ, মূল্যায়ন। প্রায় সাড়ে তিনশত পৃষ্ঠার এই সঙ্কলন ভাণ্ডারে এক অর্থে সংগৃহীত হলো বিশ শতকের এই অসামান্য ব্যক্তিত্বের জীবনগাথা। সম্পাদক লিখেছেন, “এ রকম মনস্বী বিপ্লবী মৌল মানবতাবাদের অগ্রণী পুরুষ শিবনারায়ণ রায়ের উপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা খুব একটা সাধারণ ব্যাপার নয়।” এই প্রায় অসম্ভব কাজটি সম্পাদনা করেছেন অমিত চৌধুরী। এই সঙ্কলনে যাঁদের প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে তাঁরা হলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়, অন্নদাশংকর রায়, অম্লান দত্ত, জ্যোতির্ময় দত্ত, শামসুর রাহমান, আনিসুজ্জামান, হাসান আজিজুল হক, গোলাম মুরশিদ, মীনাক্ষী দত্ত, সমরেশ মজুমদার, তসলিমা নাসরিন, আহমেদ মযহার ও হাসানআল আব্দুল্লাহ প্রমুখ। নিবেদিত কবিতাপর্বে স্থান পেয়েছেন শঙ্খ ঘোষ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। আর শিবনারায়ণ রায়কে নিয়ে পত্রপর্বে আছেন বার্ট্রান্ড রাসেল, তারকানাথ সেন, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, আবু সয়ীদ আইয়ুব, সাগরময় ঘোষ, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নির্মলেন্দু গুণ ও জয় গোস্বামী প্রমুখ। বেশ কিছু দু®প্রাপ্য ছবিও আছে এই সঙ্কলনে। সব কিছু মিলে ‘মূল্যায়ন’-এর এই বিশেষ সংখ্যাটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল পর্ব ধারণ করে নাক্ষত্রিক আলোকে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। শাশ্বতিকী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন তরুণের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হয়। আন্তরিক প্রচেষ্টা, কর্মতৎপরতা, নিষ্ঠা ও বাংলা মুল্লুকের বিভিন্ন অঞ্চলের লেখকদের সমন্বয় সাধন; এমনকি বর্হিবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লিখিয়েদেরও একত্রিত করার এই প্রক্রিয়াকে সুস্থতার প্রতীক বলা যায়। বর্তমান সংখ্যাটি (দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা) মূলত নাটক সংখ্যা হলেও প্রবন্ধ, গল্প, অনুবাদ, কবিতা কিছ্ইু বাদ যায়নি। আছে এই সময়ের নাট্য জগতের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব শিমুল ইউসুফের একটি সাক্ষাৎকারও। নাটক লিখেছেন মলয় ভৌমিক, সাইমন জাকারিয়া, ডা. পরিমল সরকার, আসাদ রাংগা ও পত্রিকাটির সম্পাদক মোজাফ্ফর হোসেন। নাটক বিষয়ক প্রবন্ধগুলোর ভেতর দিয়ে আবহমান বাংলা নাটকের পটভূমি সহ ইয়োরোপিয়ান নাটকের কাছে এর ঋণও তুলে ধরার প্রয়াস দেখা যায়। তবে, সম্ভবত, সদ্য প্রয়াত বলেই সেলিম আল দীনকে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ‘শহীদ মুনির চৌধুরী ও তার কবর নাটক’ শীর্ষক প্রবন্ধে সুজিত সরকার লিখেছেন, “...কেবল একুশের ঘটনা প্রবাহ নয়, বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের হাজার বছরের ইতিহাসের তাৎপর্যও পর্যবেক্ষণ করা যায়।” অন্যদিকে ‘নাট্যদর্শক’ শিরোনামের প্রবন্ধে মাসুদ রহমান লিখেছেন, “ভারতীয় সাহিত্যতত্ত্বের ঐতিহ্য রসসংক্রান্ত দর্শন।” নাটকের ক্ষেত্রে এই দু’টি সত্য সম্ভবত সমান প্রযোজ্য। এই সঙ্কলনের দুর্বলতম দিক হলো কবিতা, যদিও লিখেছেন মোট ২৪ জন। আবার কবির গুরুত্ব বাড়াতে (হয়তো অসচেতন ভাবেও হতে পারে) “অমুক কবির কবিতা” লেখা হয়েছে। তবে কেনো এই গুরুত্ব আরোপ করা হলো লেখাগুলো পাঠ শেষে তা বোঝার উপায় নেই। কিন্তু না বললেই নয় যে রহমান হেনরীর কবিতাটি প্রণিধান যোগ্য। সবকিছু মিলে শাশ্বতিকীর এই সংখ্যাটি অজস্র লিটল ম্যাগের রাজ্যে একটু আলাদা করে চোখ বোলানোর মতো। —হাআ |