|
Book Review বাংলা
|
|
গ্রন্থালোচনা
আগলে রাখি নদীর সম্ভ্রম
নব্বই দশকের কবি মতিন রায়হান। আগলে রাখি নদীর সম্ভ্রম তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। প্রায় বিশ বছরের ব্যবধানে যখন ওই দশকের অন্যান্য অনেক কবির বইয়ের সংখ্যা দুই ডজন ছাড়িয়ে গেছে, তখনও মতিন তার ভাষাকে নিজস্ব রূপ দেবার জন্যে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অবিরাম। ফলত আগলে রাখি নদীর সম্ভ্রম শুকিয়ে যাওয়া নদী ও প্রকারন্তরে গ্লে¬াবল ওয়ার্মিংয়ের মাধ্যামে নিয়ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠা পৃথিবীর কথা বলতে সচেষ্ট হয়েছেন।
ঘর বলে কিছু নেই, তবু ঘরের টানেই ঘুরেফিরে আসা...
প্রিয় বসতিকে টানে পাড়ভাঙা-নদী, বৃষ্টিসূত্রে ইলিশের ঢেউ
কামড়ে ধরে তীর, মহান কৈবর্ত তবে মাছরাঙা পাখি!
এমনই জলের নিয়ম, জলে ও অনলে লেখা ধীবর-কাহিনী...
 (ঘরবাড়ির কথা)
আসলে এক ধরনের শূন্যতার দিকেই আমাদের যাত্রা
তুমুল ভিড়ের মধ্যেও ক্রমশ আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি
 (যাত্রা)
একেকটি নদীকে বুকপকেটে পুরে আমি কতবার ছুটে গেছি
সমুদ্রের কাছে; সমুদ্র আমাকে শুনিয়েছে
পলাশ শিমুল আর বর্ণমালার গান
 (নদী ও সমুদ্রের গান)
এইভাবে একে একে নিজস্ব ভাষা ভঙ্গি দিয়ে যেমন কবি তাঁর সময় ও পারিপার্শ্বিকতাকে আবিষ্কার করেন কবিতার পরতে পরতে, ঠিক তেমনি পাঠকও তাঁকে চিনে নেন আলাদা উপায়ে। কবির প্রতি আমাদের তাই থাকে অফুরন্ত প্রত্যাশা। “মানুষের মতো দীর্ঘ হতে পারে এমন সাধ্যি সময়েরও নেই” সুদৃঢ় এই উচ্চারণ যে কবির তাঁর কাছে প্রত্যাশার মাত্রাটাও বেড়ে যেতে পারে।
অক্ষরযোজনা
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক কবি বিষ্ণুপদ রায় মূলত ইংরেজীতে কবিতা লেখেন। তবে আশার কথা যে তিনি বাংলা কবিতায়ও গতিশীল। শব্দগুচ্ছ’র পাঠক কিন্তু তার ইংরেজী কবিতার সাথেই বেশী পরিচিত। তবে কলকাতা, শান্তিনিকেতন সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু লিটল ম্যাগেও এই কবির বাংলা কবিতা প্রায়শই চোখে পড়ে। অক্ষরযোজনা বাংলায় লেখা তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ।
সুখের সেই দিনগুলির কোনও নাম ছিল না
ছিল বৌদ্ধ স্থাপত্যের মতো নিষ্কলঙ্ক শান্তি
ছিল শুদ্ধ নারীর এলোচুলে নীল ডাগর চোখ
 (সুখের সেই দিনগুলি)
এই কাঁটাতারের বেড়া
সাপের মতো চলে গেছে যতদূর
রাস্তার উপর বাতাস কাটে বালু
 (চার অধ্যায়)
তার উচ্চারণে আরো পাওয়া যায় “বড় রাস্তা ধরে ছুটে চলা এই জীবন” সম্পর্কিত নানা বিষয়াদি। ইংরেজীতে লিখতে লিখতে বাংলায় এই প্রবেশ আরো দীর্ঘ হয়ে উঠবে এই প্রত্যাশা অবশ্যই করা যায় বিষ্ণুপদ রায়ের কাছে। তবে, ভাষা যাই হোক না কেনো কবিতা কিন্তু সর্বদা জীবনের কথা বলে, সেই জীবনকে তিনি বুনে যাবেন, ভাষার শৈথিল্য উপড়ে ফেলে।
বাতাসের পায়ে পায়ে
গোলাম মঈনউদ্দিনের কবিতার বই বাতাসের পায়ে পায়ে। তিনি শব্দগুচ্ছ পত্রিকার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন এর জন্মলগ্নে। বাংলা একাডেমির একজন পরিচালক হিসেবে এই পত্রিকাকে সাহসও যুগিয়েছিলেন। যদিও নিজেকে তিনি কখনো কবি দাবী করেননি, ইতিপূর্বে এক চিঠিতে এই কথা জানিয়েছেন, তারপরেও তাঁর মধ্যে একজন কবি অনবরত আঁকিবুকি করে। ফলতঃ গদ্যের ভুবনে বিচরণ ও বই বিপণনের তাত্ত্বিক কাজে যুক্ত থাকার পরেও তিনি কবিতায় ঘুরে ফিরে আসেন। এবং অনেকাংশেই নিজের জীবনের গল্প খুব সহজ ভাবে বলে যান। প্রাণের আনন্দগুলোকে ধরে রাখতে চান। এই চাওয়া সফলতা পাক।
কবিতাকে বলা হয় শ্রেষ্ঠতম শিল্প, কেউ কেউ এ-ও বলেন যে এখানে সফলতা পেতে জীবনকে এই শিল্পের পিছনে উৎসর্গ করার বিকল্প নেই। আজকের এই আলোচকেরও সেই মত। আলোচিত তিন গ্রন্থের লেখকও এই মতে বিশ্বাসী বলে ধারণা করি। এবং সাথে সাথে এই তিন কবিকেই কৃতজ্ঞতা জানাই বইগুলো আমার মতো একজন অধমকে উৎসর্গ করার জন্যে।
আগলে রাখি নদীর সম্ভ্রম, মতিন রায়হান, র্যামন পাবলিশার্স, ঢাকা, ২০১২
অক্ষরযোজনা, বিষ্ণুপদ রায়, নবপত্র, কলকাতা, ২০১২
বাতাসের পায়ে পায়ে, গোলাম মঈনউদ্দিন, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, ২০১১
 —হাআ
|
|