Back to Issue 45_46 Back to Front Page |
Issue 45/46 : July - Dec 2009 : Volume 12 No 1/2
মৌলি আজাদ হুমায়ুন আজাদ এক রক্তাক্ত কবির মুখ “পরিকল্পিত উপায়ে মৌলবাদীরা একজন কবিকে যেভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল তার নজির বোধ করি বর্তমান বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই। মধ্যযুগে বিশেষত ইউরোপে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কথা আমাদের জানা আছে। বাইবেলের বিপক্ষে যায় এমন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার প্রচার করায় ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। আর মুক্ত চিন্তার বিকাশের মাধ্যমে তরুণদের বিপথে নেবার অপবাদ দিয়ে প্রাচীন গ্রীসে বিষপানে হত্যা করা হয় দার্শনিক সক্রেটিসকে [গ্রন্থের ভূমিকা]।” আর একটি মাত্র বই যার নাম পাক সার জমিন সাদ বাদ যাতে মৌলবাদীদের আসল রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল তা পড়ে অশিক্ষিত কয়েকজন মানুষরূপী পশু কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে ও চাপাতির আঘাতে দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে নেবার মত ঘঁটনা ঘটিয়েছিল বাংলাদেশের এক মাত্র প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদের জীবনে। কতটা নির্মম ও বর্বর তারা! তাদের অসভ্য আচরণে ব্যথিত হয়ে তাইতো হাসানআল আব্দুল্লাহ পশুদের প্রতি ঘৃণা ছুঁড়ে দিয়ে ড. হুমায়ুন আজাদের মহত্তম দিকগুলো তুলে ধরতে লিখেছেন হুমায়ুন আজাদ: রক্তাক্ত কবির মুখ। এই বইটিতে রয়েছে মোট ১০টি অধ্যায়: নিউইয়র্কে হুমায়ুন আজাদ, সাক্ষাৎকার, হুমায়ুন আজাদের কবিতা, পাক সার জমিন সাদ বাদ: ভয়ংকর বাস্তবতা, আক্রমণের পর আর্ন্তজাতিক অঙ্গণে প্রতিক্রিয়া, বারমুনগ্রাদে ড. আজাদ, দেশে ফিরে রাড়িখালে সংবর্ধনায়, হুমায়ুন আজাদের কবিতার অনুবাদ, মৃত্যু এবং অতঃপর, ও রক্তাক্ত কবির মুখ। লেখকের সাথে প্রয়াত কবির যে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তার পরশ ছড়ানো রয়েছে বইটির পরতে পরতে। বাইরে থেকে রাগী বলে প্রতীয়মান হুমায়ুন আজাদ-এর সাথে লেখক নিউইয়র্কে কত সহজেই ঘনিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, শুধু লেখক নয় তার স্ত্রী নাজনীন সীমনও ড. আজাদ কর্তৃক অপ্রস্তুত হয়েও যে পরবর্তীতে তাঁর কতোটা ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন তা বইটির প্রথম অধ্যায়েই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লেখকের ভাষায়, “পরবর্তীতে সীমনও যে ড. আজাদের খুব ভক্ত হয়ে যাবেন সেটা আমি তখন বুঝিনি। ফলত ড. আজাদের উপর আক্রমণ ও শেষে জার্মানীতে তার আকস্মিক মৃত্যুর পর আমার স্ত্রীর চোখের জল যতোটা ঝরেছে তা বুঝি একজন ঘনিষ্ট আত্মীয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে।” দ্বিতীয় অধ্যায়ে অর্থাৎ সাক্ষাতকার পর্বে ড. আজাদের লেখালেখি, শিক্ষক জীবন ইত্যাদির উপর ব্যাপক আলোকপাত করা হয়েছে। হুমায়ুন আজাদের কিছু বিখ্যাত কবিতা যেমন ‘আমার ছাত্র ও তার প্রেমিকার জন্য এলিজি’ বা ‘খোকনের সানগ্লাস’ ইত্যাদির উৎস ও পটভূমিও উঠে এসেছে এই পর্বে। আক্রান্ত হবার পর শব্দগুচ্ছ পত্রিকার মাধ্যমে বহিবিশ্বে লেখক যে সচেতনতা জাগিয়ে তুলেছিলেন, বিদেশী লেখক-কবি ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে জাতিসংঙ্ঘের সামনে সমাবেশ করে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে সারকলিপি দিয়েছিলেন ড. আজাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার অভিপ্রায়ে এবং এইসব কর্মকাণ্ডে কি ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও পেন তার একটি দলিল হাসানআল আব্দুল্লাহর কাছে পাঠনো অসংখ্য লেখক কবির চিঠির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। জার্মানীতে মারা যাবার পর দেশবিদেশ থেকে সংক্ষুব্ধ মুক্তিচেতা মানুষেরা যে সব চিঠি ও ইমেল পাঠিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আছে তাদের কথা। এছাড়াও রয়েছে হাসানআল আব্দুল্লাহ কর্তৃক হুমায়ুন আজাদের কিছু কবিতার স্বতস্ফূর্ত ইংরেজী অনুবাদ। সর্বোপরি যারা হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে ভাবেন, তাঁর লেখার প্রতি অনুরক্ত, তাঁর করুণ মৃত্যুতে আজও চোখের জল ঝরান তাদের উদ্দেশ্যে রয়েছে এক রক্তাক্ত কবির মুখ। এটি একটি যথার্থ গ্রন্থ। হাসানআল আব্দুল্লাহ, হুমায়ুন আজাদ: রক্তাক্ত কবির মুখ, সাহিত্য বিকাশ ২০০৭ প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, মূল্য: ১৭৫ টাকা |