Shabdaguchha: Logo2 edited by: Hassanal Abdullah issue: 57/58









Poetry in Bengali/বাংলা কবিতা





রবিউল মানিক

সুবাসিত মৃত্যু

অক্ষম বৃদ্ধেরা অতঃপর চায়ের দোকানে
অলস আড্ডায় মেতে ওঠে এবং নিশ্চিত ভাবেই
তাদের আলোচনায় উঠে আসে বিবস্ত্র যৌনতা
কাঠ-কয়লার গনগনে লালাভ আভার দিকে চোখ রেখে
আফ্রোদিসিয়াক, ভায়াগ্রা ও মৃগনাভী কস্তুরীর
ব্যবহার বিষয়ক সরস বিতর্ক

প্রদীপ্ত সূর্যের মতো ওদের যৌবন কেটে গেছে
কুঁচকানো চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে বিঁধে আছে
অতীতের স্পর্ধিত পদচিহ্নের ছাপচিত্রের সময়ের চোরকাঁটা
নিরন্তর, কাল খুবলে নিয়েছে শরীরের যৌবনিক আস্তরণ
ভবিষ্যতের উজান স্রোত ঠেলে ভেসে আসে মৃত্যুর সুবাস


বরই গাছ

রেল সড়কের খাদে
ডানকানা মাছেদের আবাস পেরিয়ে গেলে
সজনে, সুপুরি, জাম, বাঁকানো জামরুলের প্রাকৃতিক ছায়াঘেরা
বাড়ি তোমার; বাইরে বুনো তিৎপল্লার গাছের হলদে,
পলতে মাদার গাছের লালচে ফুলে ফুলে 
ছাওয়া টোপাদানার দাম ভর্তি ব্যবহৃত পুকুরের শিয়রে দাঁড়ানো
একটি বরই গাছ ক্রমেই বাড়ছে আকাশের দিকে
আর আমিও পরিণত হচ্ছি অশীতিপর বৃদ্ধে।


অনন্ত ঘুম

আমি জেগে উঠলাম অনন্ত ঘুমের মধ্য থেকে
শূন্যতার গহীন গহ্বরে—
সুপ্ত ছিলাম নিশ্চিত, স্বপ্নময় কবরের প্রশান্তিতে

জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মতো কালো শব্দের কবিতাগুলো
প্রতিনিয়ত আমাকে জাগানোর গাঢ় অভিপ্রায়ে
কূলহীন সাগরে দুঃখের নৌকা বেয়ে
বিক্ষুদ্ধ তরঙ্গমালা ঠেলে
উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করে আসছিল
এবং শেষাবধি সৈকতের তীরে আছড়ে পড়ল
আর আমি জেগে উঠলাম অনন্ত ঘুমের মধ্য থেকে


বিদীর্ণ নিঃশ্বাস

নৈঃশব্দের নিভৃত কান্নায়
আমার বুকের মধ্যে যে জল জমেছে
তাতে অনায়াসে নিজেকে ভাসিয়ে নিতে পারো
রাত্রি তার কদর্যতার প্রলেপে বলিরেখা আঁকে
বিষণ্ণ ব্যথার আর প্রেত ছায়ার চাঁদের আলো
ঝরে পড়ে মৃত্যুর অসহ মুখে

স্তব্ধ রাতের বিরান প্রহরে প্রার্থনায় অবসন্ন
শীর্ণ হাত উঠে যায় বিক্ষুদ্ধ, নিঃসীম আকাশের দিকে
আর নিঝুম চোখের কোণ থেকে দু'ফোঁটা করুণ মেঘ
ঝর্ণাধারা হয়ে নেমে আসে
গাঢ় অন্ধকার শুষে নেয় বিদীর্ণ নিঃশ্বাস


নিভৃত গুহাবাসের কাল শেষ হয়ে এলো

সেই ভালো ছিল
পশুচর্ম, গাছের বল্কলে আচ্ছাদিত প্রাকৃত মানুষ
তার নশ্বরতার সীমানা জেনে নিয়ে অশান্ত রাত্রিতে
নিরাশ্রয়ের শরীরে মাথা পেতে দিতে শিখেছিল
আর তখুনি প্রমিথিউস অ্যাপোলোর অগ্নিরথ থেকে
মুঠোভর্তি দু'হাতে আগুন আনলেন
অতঃপর মনোহীনতার বিকারে আগুন জ্বেলে
গুহা পুড়িয়ে নির্মিত হল দৃষ্টি নন্দন নগর
এবং এই নগরেই প্রতিদিন নিরাশ্রয়ী মানুষেরা
আশ্রয়ের জন্যে পথে পথে ঘোরে

প্রমিথিউস আগুন কেন তুলে দিয়েছিল মানুষের হাতে!


ঢাকা


রাসেল আহমেদ

জনক ও জাতক

তবে তাই—
অন্ধকারে অমাবস্যায়, গুহা আর গুহাচিত্রে
সভ্যতার যাতায়াত হোক;
ঘাড়ের তন্তু ফুলে-ফেঁপে ওঠে
বন্দুকের গুলির মতো মুখ ফসকে বলে দিই
“আমি সেই
অসংলগ্ন পুরাণের জনক ও জাতক!”

যোনির আড়ষ্ট ফুলে নেমে আসে শিশু
ক্রুশবিদ্ধ কাঁটাতারে যন্ত্রণার তীব্র হলাহল
জমা হয়;
রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে ক্রমশই আঙুরের থোক।
নদীর গোপন অঙ্গ ভেঙে যায়
সেতুর বিভাসে থাকে ঢেউয়ের ক্রন্দন
মিছিলের মধ্যখানে চীৎকারে ঘেমে ওঠে 
		অনাহুত অন্ধকারে
নির্লিপ্ত ও নির্বিষ, বারুদসর্বস্ব যুবক।


স্টেশন

তুই
আমার
দূরাগত ট্রেন—
এই
তথ্যটুকু জানি বলেই
দেবতার
কাছ থেকে
ছিনিয়ে আনি প্রবাদ

স্টেশনে ট্রেনদের থামতেই হয়।


ঢাকা



নাজমুল হাসান

সবকিছুই কবিতা কবিতা মনে হয়

তোমার শান্ত স্নিগ্ধ অবয়ব, নিটোল হাসি, চোরা চাহনি, মান-অভিমান, চুম্বন-আলিঙ্গন, শাশ্বত প্রেমের
উদ্ভাসিত বাণী সবকিছুই কেনো যেনো কবিতা কবিতা মনে হয়। ধূসরতা-আলস্য, মগ্নতা, নাগরিক 
অস্থিরতা, বিষবাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়া বিষাদকেও কবিতা কবিতা মনে হয়। গলে যাওয়া, পচে যাওয়া, 
খুন হয়ে যাওয়া সহ সব কিছুকেই কবিতা কবিতা মনে হয়। বাস-ট্রাক, অটোরিকসা, মোবাইল ফোন, 
ইন্টারনেট, কম্পিউটার, বইপত্র সবকিছুই কবিতা কবিতা মনে হয়। পাখির কূজন, নদীর কলতান, রবীন্দ্র-
নজরুল, লালন-হাছন, গীটার-বেহালা সবকিছুকেই কবিতার মতো লাগে—কবিতা কবিতা মনে হয়।

মগ্নতার প্রতিভাস

জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় চোখের সামনে আহত বকুল পুড়ে গেলেও কোমল হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেরানো যাবে না।
বুকের ভেতর একরাশ অভিমান মিছিল করে লালায়িত বাসনার ফুল ফোটাতে চাইলে তাকে ব্যারিকেড 
দিতে হবে হঠাৎ আগন্তুকের মতো। শিশিরের শব্দকণার মতোও জানানো যাবে না—আমি ভালবাসি। ভালবাসি
তোমার অধর। তোমার বুকের ঢেউ—ঝর্ণাধারার মতো তুমুল কাঙ্খিত হাসি। ভালবাসি মেঘ—ভালবাসি বৃষ্টি। 
শুধু ভালবাসি আর ভালবাসি, তোমাকে ভালবাসি। এই জ্যৈষ্ঠের উত্তপ্ত প্রহরে হৃদয়ে কী ভীষণ হাহাকার। 
শাকিরার উন্মাতাল নৃত্য আর সুরের যাদুতে পড়শীরা মোহাবিষ্ট হয়ে থাকার মুহূর্তে শুধুই মনে পড়ছে তোমার 
কথা। কী সুন্দর পরিযায়ী পাখির মতো দিনগুলি! উড়ে উড়ে, দূরে...বহুদূরে...এই সব বিবিধ স্বপ্নের নির্লজ্জ 
প্রকরণে বেঁচেবর্তে থাকি। স্বপ্নহীনতার মাঝেও তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। 

আলো-আঁধারি বাক্যালাপ

ভাসতে-ভাসতে দিগন্তপ্রসারী স্বপ্নগুলো ধূসরতার মাঝে লুটোপুটি খেতে খেতে ক্রমশই তলিয়ে যাচ্ছে, আর আমি 
যাবতীয় অন্ধকার সরিয়ে আলোতে আসার কী চেষ্টাটাই না করছি। আমি স্বপ্নশিকারে যাওয়ার আগে যে কিশোরী
চোখে চোখ রেখে পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল সেও এই অব্যক্ত বোবাকান্নার মুহূর্তে উধাও। নিতান্ত অসহায় হয়ে আমার
মনে ঘুরপাক খাচ্ছে আবুল হাসানের সেই উক্তি—অবশেষে জেনেছি মানুষ একা... নক্ষত্রের চেয়েও ধ্র“বসত্যকথাগুলো
ঝংকারে ঝংকারে অদ্ভুত আলোড়ন তুলছে মননে। আমার ভাবনারা প্রতিক্ষণে মৃত্যুর দরজায় উঁকি মেরেও ফিরে 
আসছে। ফিরে আসছে দোকানে ঝুলে থাকা আঙুরের মতো থোকা থোকা স্বপ্ন নিয়ে।

নাটোর


প্রবীর দাস

এক একটা সকালে

এক একটা সকালে ঘোর লেগে থাকে—
গত রাত্রে অযাচিত বৃষ্টি, তার আগে
অলৌকিক সান্ধ্যভ্রমণ...ভ্রমণসঙ্গিনী তুমি-ই
রাস্তার দু’ধারে সাজানো নির্বাক বৃক্ষের সারি
শুভেচ্ছাপত্র উড়িয়েছে নিজের ইচ্ছায়
এবং আমাদের শেষ না হওয়া গল্পে
দু’জনকে উথালপাথাল অসীমের পথে...

এক একটা সকালে পাখিদের কনসার্ট
দক্ষিণের সংলগ্ন বাগান থেকে পারিজাত
স্কুলগামী উচ্ছল বালক-বালিকা দৃশ্য থেকে
উড়ন্ত প্রজাপতি দেখি, খুঁজে পাই  ভূমধ্যসাগর—
মায়াজীবনের দু’হাত ভরে গচ্ছিত রাখি
নান্দনিক ইশারায় কুঁড়ি থেকে ফোটানো ফুল...

এক একটা সকালে হেমন্তের সান্দ্র বাতাসে
মনে হয় দুঃখের স্তূপ কেউ
ওলট-পালট করে গ্যাছে—

শান্তিনিকেতন


নাজনীন সীমন

অসমাপ্ত কবিতা

রাত একটার একটি চুমুর ভয়াবহতা সবাই 
জানে কম বেশী। অন্ধকারে দুই জোড়া 
ঠোঁটের সন্ত্রাস নিতান্ত অপরিণামদর্শী নয়
কস্মিন কালেও; ইচ্ছেরা অবাধ্য হয়, পড়ে
থাকে ইড ও সুপার ইগো, উল্লসিত হয়
আদিম পিপাসা, ঘেমে নেয়ে একাকার 
শরীরী আকাক্সক্ষা...

কেবল একটি চুমুর স্ফুলিঙ্গে শুরু ভয়াবহ
এ অগ্ন্যুৎপাত থেকে রক্ষাকারী কোনো মন্ত্র,
প্রতিরোধক, প্রতিষেধক কিছু নেই, ছিলো
না কখনো। বাঁচতে কি চায় আদৌ কেউ? 
যদিও কাক্সিক্ষত ঐ চুম্বন কারো কারো মিলে যায়,
কেউ থাকে আজীবন প্রতীক্ষায় তীব্র হাহাকার 
আর পাললিক শিলার মতোন কঠিন যন্ত্রণা
বুকে নিয়ে যদি কখনও কোনো এক মধ্যরাতে
কারো জোড়া ঠোঁট উষ্ণতার খোঁজে নিখাদ প্রেমের
সঘন চুম্বন আঁকে কেঁপে ওঠা বিদগ্ধ ভালবাসায়।

নিউইয়র্ক


মুনীব রেজওয়ান

অন্ধকার ভেঙে ভেঙে

অন্ধকার ভেঙে ভেঙে আলো খুঁজি
ভিজে যায় রাতের প্রান্তর
আকাশে মেঘের কোলে চাঁদ
লোফালুফি খেলা—
কারো বুকে নতুন আগুন জ্বেলে
হয়তো রাতের মতো নিভে গেছো তুমি

দিগ্ভ্রান্ত বালিকা কোমরে গুঁজে নিচ্ছে দেশলাই কাঠি
চুরি হচ্ছে এই রাতে কারো কারো বাগানের ফুল।

জার্মানি



রেজা নুর

এই জল নদী ছিল

ছোট্ট জলস্রোত
বালুতে লুকানো মুখ,
দু’পাশে গাছপালা বন ঝোপঝাড়।
এর নাম ব্ল্যাক ব্র“ক...কালো নদী।

যাবার সময় নাম ও জলের দিকে চোখ রাখি
মনে হয়, এই জল নদী ছিলো কোনোকালে।

পিলগ্রিম এসেছিলো মিঠে জলের তৃষ্ণায়
সেই জল ক্লান্ত তরল এখন,
নদী আর নদী নেই, শুধু
ধু ধু সাদা চর। দুই ধারে উঁচু উঁচু বাতির পিলার।

ইতিহাস আর সময়ের সুপ্রাচীন চঞ্চলতা 
নিমেষে আমিও দেখে নিই...

বহুক্ষণ দেখি, দেখি আবারও
সূর্য রঙ বদলায়
সকালের লালিমায় ভরা
বিকেলের বিষণ্ণ আবীরে।

হৃদয়ের নদী চলে তবুও মন্থর।

বস্টন



মনসুর আজিজ

স্যাঁতস্যাঁতে মাটির মাদুর

তুমিও ঘুমিয়ে আছো স্যাঁতস্যাঁতে মাটির মাদুরে
কান পেতে শুনে যাই গ্রামোফোনে অবেলার গান
বাঁশের রীডের স্পর্শে সুর হয় মাতাল আদুরে
সুবাসিত কাপড়ের ভাঁজে দেহ নিথর নিস্প্রাণ

জীবন গিয়েছে কেটে হরফের বেচাকেনা করে
কত যশ নাম ডাক উড়ে যায় কবুতর মন
সেমিনারে শ্রোতা ফেরে হেমন্তের কলসকে ভরে
গ্রন্থকীট খেতাবের মোহে কাটে সুফলা জীবন

গয়নার বাকশোও সযতনে রতির সিন্দুকে
মনকির নকিরের প্রশ্নে বিদ্ধ বাঁশের লকারে
লা জবাব! মূর্খ নই; বলতেও পারেনি নিন্দুকে
নতুন প্রশ্নের জটে হতভম্ব করেছে বোকারে

গ্রন্থকীট তোমাকেও খায় মাটির পোকারা আজ
দৃষ্টির পরত খুলে দেখে নাও কাফনের ভাঁজ।

ঢাকা



হাসান সাব্বির

মোমরঙ চিত্রকলা

প্রত্যক্ষ করি ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য রঙের কৌটা আর পরিত্যক্ত তুলি...। বিশাল ক্যানভাসে একটা মৃত 
নদী ধরে রেখেছে ছোট বড় অথচ অনেক অনেক ঢেউ, স্থির ঢেউ। সেখানে ঘোড়ার কঙ্কালগুলো পড়ে 
আছে আর মৃতদেহগুলো খেয়ে ফেলেছে মাটি—দেখা যায়, একটা রেলগাড়ী চলে গেছে শ্মশানের ভেতর 
দিয়ে অন্ধকারের দিকে...। অগণিত মানুষের উত্তেজিত ছায়া কতকাল যেন নড়াচড়া করছে না একচুল। 
ঝড় শেষের বিধ্বস্ততার মতো একটা সবুজ রেখা চলে গেছে আকাশের দিকে এবং গর্তের মতো অসংখ্য 
ক্ষতচিহ্ন আকাশের গায়ে— একটা জলপ্রপাত অথচ জলপতনের শব্দ নেই, যেন একটা বেশ্যা শুয়ে আছে 
বেডের উপর আর আগুনের শিখাগুলো তুলোর মতো হালকা স্থির হয়ে আছে কমলা হাওয়ায়। মূর্তিগুলো 
ধ্যানে বসে আছে যদিও সেই ধ্যান ভাঙবে না কোনোদিন কারণ ধ্যানের ভেতর মৃত্যু হয়ে গেছে সেইসব 
শরীরের যাদের দেহকাঠামো গ্রানাইট পাথরে তৈরী—অস্পষ্ট নয় একটি মুহূর্তও। 

আমরা কখনও কখনও এইসব চিত্রকর্মের ভেতর দিয়ে চলে যাই গভীর জঙ্গলে—রহস্যের জন্ম দেই—কেউ
কেউ নিখোঁজ হয়ে যাই প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার মহলে।  


কখনও অচেনা রোদ্দুর কখনও কুয়াশা

ফিরিয়ে নাও বাহুলগ্না রাতের মধ্যে—সাদা এক শূন্যতায় ভরে আছে সমকাল। কি যেন নেই—কে যেন 
নেই—হারিয়েছি সেই ইমেজ যার উপর ভর করে থাকতো এই অস্তিত্বের সাদা-কালো শরীর—রঙিন মুহূর্ত। 
জীবনের অনেক গল্প কল্পনায় মেঘ হয়ে ভাসে আবার কল্পনায় যে বৃষ্টি বাস্তবে তার রূপ চিনতে পারি না
 ঠিক! বোধ—ক্ষয়ে যাওয়া এক অস্থি! অজানার উদ্দেশ্যে উড়ে মরছি—পেছনে তাড়া করে ফিরছে ভীষণ
 এক প্রেতাত্মা! অলীক সে আর্তনাদ! যদি এই মুহূর্তটা হতো সুগন্ধিময়—রঙিন আলোর ফোয়ারায় ভরে 
থাকত সময়। কেনো হাত বাড়ালেই দূরে সরে যাও—কী এক রহস্যের মায়াজাল! মনে হয় চেনা খুব— 
কখনও অচেনা রোদ্দুর কখনও কুয়াশা।  

মধ্যরাতের হাইওয়ে থেকে উঠে আসা শব্দগুলো কেমন ভৌতিক—অন্ধকারে বজ্র-বিদ্যুতের হলুদ বিস্ফোরণ—
তারপর অনন্তকালের গভীরতা! 

মাগুরা



মেহেদী হাসান

স্বপ্নহীন  

বিশ্বাসের ভাঙা হাতুড়ি দিয়ে ওরা প্রতিনিয়ত আঘাত করে
আমার শিল্পবোধে, ফেটে চৌচির হয় বিবেকের ফুলগুলো;
যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে হয়ে ওঠে অন্ধ,
ফিরে আসে; হয়তো আবার মেলতে চায় পাখা নীলাকাশে।   

গতরাত্রে গভীর মানবিকতায় ডুব দিয়েছিলাম— 
আচানক মাথায় আঘাত পেয়ে চোখ খুলে দেখি,
মেছতা পড়া মুখে ডলছে বিবর্ণ তৈলাক্ত ক্রীম;
আর রঙ্গিন কৌটার পারফিউমের গন্ধ শরীরে। 
পাশের বিশাল আলমারিটি মোহিত হতে থাকে—
মরচেরা হয় আরো ঘন।  
ফ্লোরোসেন্ট আলোয় বসে,
বিজ্ঞানের মুখে, দল বেঁধে, অমাবস্যা মেখে দেয়: 
নুয়ে পড়তে পড়তে গাছের শুকনো ডালের মত বেমানান বোধ হয় নিজেকে।   

কঠিন রুক্ষতায় প্রশ্ন ছোঁড়ে,
আর কে আছে তোদের দলে—  
নাকি তুই একা? 
আমাদের আবার সংঘ! 
চেপেচুপে কারো মুখই মনে আসেনি, 
আমরা যে থাকতে পারিনা জোট বেঁধে
ভেড়ারা যেমন থাকে,    
একাই বেড়াই ঘুরে—হঠাৎ হয়তো কারো সাথে দেখা হয় স্বপ্নের কিনারে। 
    
মুখে মহুয়া বঙ্কিম হাসি, বেলের মতন গোল স্তন, সিগারেটের মতন সরু কটি; 
ঘোড়ার লেজের মত রাশি রাশি চুল ক্লিপের অসংখ্য মার-প্যাঁচে বাঁধা—
রক্তের জারক কণাগুলোয় বাড়তে থাকে অস্থিরতা। 
ধেয়ে যাই—যদিও অনেক দিনের জমানো পচা গন্ধ!
চামড়া কঠিনতর স্বচ্ছ—ভেতরের নাড়ি-ভূঁড়ি, নগ্ন আনাগোনা—
থেঁতলানো মুখ গোধূলির রক্তাভ বিচ্ছিন্ন আকাশে ফেরাই।
   

মাছের পোনার মত রক্ত দাপিয়ে বেড়ায় আঁটসাঁট সমস্ত শরীর জুড়ে;
পিছনের দিকে ঘাড় ফুঁড়ে বের হয় আরেকটি মাথা
সামনের দাঁত নেই—বাকীদের গায়ে রাশি রাশি ময়লার স্তর। 
সুন্দর, কুৎসিত মিলে-মিশে তৈরী করে ফ্যাকাসে পিচ্ছিল শ্যাওলা।  
 
বড় ঘুম পায়, অনেক অনেক ঘুম—
যেনো তরল পানীয়; 
সামান্য ঘৃণাও জাগে।
তাড়া খেয়ে ফিরে যায় কষ্টার্জিত আমার স্বপ্নরা।

 সিরাজগঞ্জ




Shabdaguchha, an International Bilingual Poetry Journal, edited by Hassanal Abdullah