Hassanal Abdullah An Article on Copying Swatantra Sonnet বেদখলে স্বতন্ত্র সনেট Back to Issue 47_48 Back to Front Page |
Issue 47/48 : January - June 2010 : Volume 12 No 3/4
বেদখলে ‘স্বতন্ত্র সনেট’ দখলদারিত্বের চেহারা এতোটা বদলে গেছে যে এখন আমরা যে যেভাবে সম্ভব চারপাশের সমস্তটা আপন গণ্ডিতে নিয়ে নিজের বলে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছি। এর ভয়াবহতা নিরুপণে কিছুদিন আগে আমি একটি কবিতায় কবর দখলের কথা লিখেছিলাম। কবিতাটি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ও মোজাফফর হোসেন সম্পাদিত ‘শাশ্বতিকী’ পত্রিকায় ছাপা হয়। এবার বইমেলায় সম্পাদক ও তাঁর বন্ধুদের সাথে আলাপ পরিচয় হওয়ার সাথে সাথে সুদৃশ্য এই পত্রিকাটিও হাতে এলো। আরো যে কতো কি পেলাম বইমেলায়! পরিচয় হলো সৌমিত্র দেব-এর সদ্য পরিণিতা স্ত্রী, আমাদের হাসিখুশী নতুন বউদি, পলা দেবের সাথে; পেলাম কক্সবাজার থেকে ছুটে আসা অমিত চৌধুরীর আয়োজন শিবনারায়ণ রায়কে নিয়ে তাঁর পত্রিকায় ‘মূল্যায়ন’-এর বিশেষ সংখ্যা; পেলাম রহমান হেনরীর ছোটো ছেলের যত্মে দেয়া অমূল্য উপহার দশ টাকার একটি নোট, সৈয়দ শামসুল হকের আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ ‘প্রণীত জীবন’, বায়তুল্লাহ্ কাদেরীর ‘কবিতাসমগ্র’, জাকির তালুকদারের ‘গল্পসমগ্র’ আর আমার ‘নির্বাচিত কবিতা’। সাথে সাথে এ-ও জানলাম যে আমার কবিতা, বিশেষত ‘স্বতন্ত্র সনেট’-এর কিছু পঙ্ক্তি দখল করে নিয়েছেন আমারই স্নেহভাজন শূন্য দশকের এক তরুণ কবি। নাম মিজান রহমান। ‘স্বতন্ত্র সনেট’ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০০৪) প্রকাশনা উৎসবের দু’দিন আগে আজিজ মার্কেটে তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা। পরিচয় পর্বে বললাম, “আমি হাসান আব্দুল্লাহ।” তৎক্ষণাৎ তিনি জানান যে, “হাসানআল আব্দুল্লাহ নামে একজন কবি আছেন!” আমি হেসে উত্তর দেই, “জ্বী, আমিই হাসানআল আব্দুল্লাহ।” পরে তাঁর সম্পাদিত ‘কর্ষণ’ পত্রিকায় ওই বইয়ের একটি আলোচনাও করেন তিনি। আস্তে আস্তে এইভাবে ভদ্র, মিষ্টভাষী, হাস্যোজ্জ্বল এই তরুণ আমার প্রীতিভাজনদের তালিকায় উঠে আসেন। এবছর (২০১০) মেলা থেকে ফেরার দিন আরেক তরুণ বন্ধু জামসেদ ওয়াজেদকে নিয়ে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে যখন সর্বশেষ প্রকাশিত বইগুলো সংগ্রহে ব্যস্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে দেখা হয় মিজান রহমানের সাথে। তিনি এখন কথা প্রকাশ-এর পরিচালক। আমি ওই প্রকাশনা থেকে কয়েকটি বই নিয়ে তড়িঘড়ি দাম রেখে ব্যাগে পুরে দিতে বললে মিজান তাঁর কর্মচারীদের আমার জন্যে সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট রাখার নির্দেশ দিলেন এবং সাথে সাথে আমার দিকে আরো একটি বই এগিয়ে দিয়ে বললেন, “হাসান ভাই, এই বইটি একটু দেখুন, আমার নতুন কবিতার বই।” মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে আমি বলি, “এখন আর দেখাদেখির সময় নেই, ব্যাগে ঢুকিয়ে বিল করে দিতে বলো।” নিউইয়র্কে ফিরে বরাবরের মতো সদ্য কেনা নতুন বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে গিয়ে হাতে উঠে এলো মিজানের সেই বই, ‘মাড়াই ধানের ঘ্রাণ।’ চমৎকার একটি প্রচ্ছদ এঁকেছেন সব্যসাচী হাজরা, আর বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে আমার আরেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব, কবি আবু হাসান শাহরিয়ারকে। কিন্তু বইটির যতোই পাতা উল্টাতে থাকি, ততোই শিহরিত হই, ভেতরে ভেতরে আঁৎকে উঠি, আর ভাবি এ-ওকি সম্ভব! অনেকগুলো পঙ্ক্তিই আমার পরিচিত; নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাতের ঘুম হারাম করা, মাথার ঘাম ও রক্ত পায়ে পড়া সেইসব দিনের এইসব পঙ্ক্তিকে আমি তো এতো সহজে ভুলে যেতে পারি না। একি করেছে মিজান! আমার ‘স্বতন্ত্র সনেট’-এর অনেকগুলো লাইন হুবহু নিজের করে লিখে ফেলেছে তাঁর কবিতায়! বেশ কয়েকটি কবিতার থিমও ওই গ্রন্থের সনেটগুলো থেকে নেয়া। কিন্তু থিম না হয় মেনে নিলাম, কবিতার লাইনগুলো—রক্ত ঘাম একসাথে মিশিয়ে বানানো হৃদয় নিংড়ানো চিত্রকল্পগুলো—কি করে নিজের নামে বসিয়ে দিলেন মিজান রহমান! ইংরেজীতে তো একে বলে প্লেজারিজম। আর বাংলায়! কি বলবো একে? দখলদারিত্ব! মিজান লিখেছেন: সময়ের নির্বাক জমিনে/ শব্দহীন হেঁটে যায় সভ্যতা অস্পষ্ট কুয়াশা ভরা চোখে...। (মৃত রাত) অথচ স্বতন্ত্র সনেটে আছে: শব্দহীন হেঁটে যাবো সময়ের নির্বাক জমিনে (স্বতন্ত্র সনেট ১১) একই কবিতার শুরু করেছেন তিনি এভাবে: হয়তো মৃত্যুর মাঝে—মৃত রাত থাকে; (মৃত রাত) ১২১ নম্বর সনেটটি শুরু হয়েছে: হয়তো মৃত্যুও মাঝে মাঝে ভয়াবহ রাত জেগে/ থাকে; (স্বতন্ত্র সনেট-১২১) তাঁর বইয়ের প্রথম কবিতায় লিখেছেন: ...কর্মব্যস্ত রাত। ইতোমধ্যে মৃতদের সাথে অনেক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি ... বালিশের নিচে কিম্বা মশারির ভাঁজে ভাঁজে... (সারারাত মৃতদের সাথে) অথচ ৬১ নম্বর সনেট শুরু হয়: অনেকগুলো রাতও আমি ইতিমধ্যে না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি একা একা; ...দৃঢ় কর্মব্যস্ত রাত। (স্বতন্ত্র সনেট-৬১) তাছাড়া ৮৭ নম্বর সনেট: জীবন খুঁজেছি আমি বহুবার বালিশের নিচে খাটের তলায় আর বহুরূপী মশারীর ভাঁজে... (স্বতন্ত্র সনেট ৮৭) ওদিকে আমার ৩ নম্বর সনেটটির দু’টি পঙক্তি: শ্রাবণী চাঁদের সাথে সারসের সামান্য মিলন কক্ষপথে যদি আনে শুদ্ধির বাতাস, নেই তাতে কোনো ক্ষতি; (স্বতন্ত্র সনেট-৩) মিজান রহমান তুলে আনলেন এতোটুকু কষ্ট না করে: শ্রাবণী চাঁদের সাথে কক্ষপথ হেঁটে হেঁটে (অপেক্ষমান সম্ভাব্য নতুন রোদ্দুরের জন্য) একই কবিতায় মিজান কি অনায়াসে তুলে দিলেন: সাতশ বছর পর যে-পাখি চোখ রাখে সুবিন্যস্ত সৃষ্টির দর্পণে... সম্ভাব্য নতুন রোদ্দুরের জন্য অপেক্ষমাণ। (ঐ) অথচ, তাঁকে একটুও আটকালো না নিচের পঙক্তিগুলো: সাতশ বছর পরে পেয়ে যাই আরেক পানীয়, ... সুস্থ সুবিন্যস্ত সৃষ্টির দর্পণে। ... নতুন রোদ্দুর আর আমাদের সন্তানেরা ফসল নির্ঘাত পাবে। (স্বতন্ত্র সনেট-২) আবার ৪৬ নম্বর সনেট শুরু হয়: অতোটা কাঙ্গাল নই, শেষে তুমি যতোটা ভেবেছো। (স্বতন্ত্র সনেট-৪৬) মিজান রহমান লেখেন: অতটা ক্ষুধার্ত নও—যতটা ভেবেছ (ক্ষুধার দহন) আরেকটি সনেট: এখানে দুরন্ত অবসর নেই; নেই মধুমতি; ... হাড্ডিসার রাস্তাগুলো শহরের নাভিমূল সেঁটে নিরন্তর দৌড়ায় সম্মুখে, ...এখানে ইটের ঘর রতি- ক্রিয়া করে ঘনঘন। প্রজনন কমানোর বড়ি আছে ঢের... (স্বতন্ত্র সনেট-৬) মিজান রহমান আমার এই লাইনগুলো অনায়াসে দখলে নিয়ে যান: এখানে দুরন্ত যৌবন নেই, নেই সান্ধনদী... এখানে হাড্ডিসার রাস্তাগুলো নাভি তুলে দাঁড়িয়ে থাকে ইটপাথরের সাথে রতিক্রিয়ার উন্মত্ত আবেগে। ...ওঠে প্রজনন কমানোর প্রতিযোগিতা।... (দাঁড়কাকের ডাকে মিশে যায় গাঢ় অন্ধকার) কী অনায়াসে তিনি ‘অবসর’ শব্দটি তুলে বসিয়ে দিলেন ‘যৌবন’ আর ‘মধুমতি’র জায়গায় বসালেন ‘সান্ধনদী’। আবার যেখানে ‘হাড্ডিসার রাস্তাগুলো শহরের নাভিমূল সেঁটে’ রয়েছে সেখানে ‘নাভি তুলে’ দিলেন তিনি। কি চমৎকার! এই সাহস এই তরুণ কবিকে কে দিলেন! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে অন্যের কবিতার লাইনগুলো এইভাবে দখলে আনা যায় কিনা। কিছুদিন আগে এক সমালোচক আমার কবিতাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছিলেন। আদতেই, মৃত কবিতার হাড়মাস তুলে নিলে কবিতা কি কখনো প্রতিবাদ করতে পারে! আজ হয়তো সেই সমালোচক এবং তাঁর অন্যান্য ভক্তবৃন্দ হেসে কুটিকুটি হবেন এই ভেবে যে একজন তরুণ কয়েকটি কবিতার লাইন নিয়েছেইবা, তাতে কি আর মহাভারত অশুদ্ধ হলো! অথবা ভাববেন যে, মিজান রহমান তাঁর মাত্র এক দশকের অগ্রজ হাসানআল আব্দুল্লাহ নামের এক ‘মৃত কবি’র সনেটগুলো তাঁর কবিতায় তুলে দিয়ে ওই সনেটগুলোকে অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন! আমি কিন্তু এই দখলদারিত্ব মেনে নেবো না, অনাদি কালের কোনো পাঠকতো নয়ই। Feedback: 1. Dear Hassanal Abdullah, Shocking! Amazing! What a tribute to the power of your poetry! Jyotirmoy Datta, Kolkata 2. একি অবস্থা । একি ভয়ংকর অবস্থা । তবে এর জন্য বাংলাদেশে আইনি প্রক্রিয়া খোলা আছে কবির জন্য । সৃষ্টিশীল কাজে কোন চোরের স্থান নেই। ফয়সল অভি, চট্টগ্রাম 3. Dear Mr. Abdullah, I was shocked to read this but at the same time this type of incident is not the first time in history. At last I feel relieved that the truth has come forward. Best Wishes, Sonnet Mondal, Sweden 4. সুপ্রিয় কবি, আমার শুভেচ্ছা জানবেন। লেখা পড়ে মর্মাহত হলাম। আসলে এমন কিছু লেখক আছেন যারা অন্যের লেখাকে নিজের বলে দাবী করেন। তারা সত্যিকারের কোন লেখক নন বা হতে পারেন না। এমন সব লেখকদের খুঁজে বের করে গণ মাধ্যমে তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা উচিত বলে আমি মনে করি। একজন সত্যিকার লেখকের কষ্টের ফসলকে অন্য কেউ বিনাশ্রমে নিজের নামে চালাবে সে কথা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমি এর নিন্দা জ্ঞাপন করছি। কুমড়ো ফুলের শুভেচ্ছাসহ আব্দুল আজিজ, নিউইয়র্ক 5. Dear poet, How can I get your book. I live near Bricklane. Some Bengali book stores here interested in your sonnets [Swatantra Sonnet, (2nd ed), Dhaka, 2004]. Kobir Hussain, London 6. হাসান ভাই, আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ। আমাদের পাঠ অত্যাবশ্যকীয় কবিদের মধ্যে এখনও কয়েকজন সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ রয়েছি। আমি আজ-কালের মধ্যেই তা সংগ্রহ করব। আপনার বিশ শতকের বাংলা কবিতা সংকলনটির জন্য এবার মাওলা ব্রাদার্সে ঢুঁ মেরেছিলাম, পাই নি। আশা করি, আগামী বইমেলায় পাব, সেইসাথে শব্দগুচ্ছ-র সংখ্যাগুলোও। আমি ফেসবুকের মাধ্যমে আপনাকে আমার কবিতা পাঠাব। কবি ও কবিতার জয় হোক, জয় হোক মানবতার। আশিক ইশতিয়াক, ঢাকা 7. I think you should consider making it a more professional enterprise. Translation is something that needs to be practised as an art. It is very difficult indeed to produce a proper translation of anything, let alone poetry. Mr. Abdullah, have you considered publishing a new volume of translations from your poetry? Let me know if you are interested. I will be glad to take it up on my own. I have recently completed a book of translations from the poetry of Soumitro Dev. Arjun Choudhuri, Dhaka 8. অবাক কাণ্ড! এভাবে চললে তো কবিতার ইনস্যুরেন্স করাতে হবে! চিমটি খান, কানাডা 9. খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা! মানতে খুবই কষ্ট হচ্ছে...মানতে পারি না কিছুতেই... মোজাফফর হোসেন, রাজশাহী 10. What can I say? This is a shameless effort. If it was done in any country in the western hemisphere, there would have been serious consequences both for the writer and publisher. Unfortunately, Bangladesh is a country where many people don't know exactly how to separate uniqueness from influence, talent from plagiarism, and so on. In many/most western countries education system provide a site for the teachers to detect any plagiarism in students’ work as they have zero tolerance for it. So, from an early age, students become aware of this high proficiency word, ‘Plagiarism’. Probably, by now, we became an accepting nation who can endure everything--from copying someone’s lines to changing our history to continuing the savage act to torturing, killing, mutilating people’s body for the sake of religion to seeing flags waving from war criminals’ cars. So, it’s not a wonder that we will have to tolerate this ‘cut and paste’ method. Now, the question remains if this really is plagiarism. Let’s glance at the definition of this word: “Plagiarism is the act of taking the writings of another person and passing them off as one’s own. The fraudulence is closely related to forgery and piracy-practices generally in violation of copyright laws.” According to this definition, the above poet should be convicted for plagiarism for sure though the enforcement of law is awaited to be seen. However, it would be nicer if both the poet and publisher come forward at least to apologize. This way, their names could be enlisted on Guinness Book of Bangladesh (lol) for apologizing in public, and honesty as well since we lack such practice as a nation. Thus, they could be role models for others. One crucial thing to mention here is that Mizan Rahman is not the only poet who had copied Hassanal’s lines. I’ve seen them before in some other poets’ writings in a lesser extent; especially, some have copied lines from his Swatantra Sonnet and his epic, Nakhkotra O Manusher Prochhad. And, they are very significant poets. I like to clarify the fact that those lines were not influenced by his themes or style, but literally copying, and thus, plagiarizing. Since the longitudes of those copied lines are not as large as the above poet, and we are not talking about them here, I restrict myself from mentioning their names. I’m surprised to see that plagiarism is becoming a contagious disease in our society and the people who have engrained this lowest quality within themselves in a novice way as Albert Einstein said: “The secret to creativity is knowing how to hide your sources” are trying to be creative people. And, when someone steals line after line from someone or even the entire book compiled by someone, what really can we say about these immoral acts except only that we are threatened by such moral degradation? Again, it’s well accepted trying to write like others, working on the same thematic base, setting up the same tone, using same type of images, and so on in literature. However, it’s unfathomable when cut and paste, or stealing someone’s entire work occurs. It really hurts when “The seed ye sow, another reaps; The wealth ye find, another keeps; The robes ye weave, another wears; The arms ye forge, another bears” as Percy Bysshe Shelly said. It hurts the same way when a mother has to let her precious child call someone else ‘mother’. It bleeds profoundly from the mother’s heart and soul. And, what else is art to its creator than his/her own flesh and blood? Naznin Seamon, New York |