|
Contributors:
Poetry and Essays:
Hassanal Abdullah
Roni Adhikari
Kayes Ahmed
Rassel Ahmed
Chak Amitava
Pallav Bandyopadhayay
Stanley H. Barkan
Nicholas Birns
Jyotirmoy Datta
Jyotiprakash Dutta
Caroline Gill
Nirmolendu Goon
Clinton Van Inman
John McLeod
Manas Paul
Matin Raihan
Hasan Sabbir
Naznin Seamon
Amiyakumar Sengupta
Letters to the Editor:
Maria Bennett
Laura Boss
Stephen Cipot
Joan Digby
John Digby
Arthur Dobrin
Kristine Doll
Maria Mazziotti Gillan
Adel Gogy
Mary Gogy
Mike Graves
Leigh Harrison
Yvette Neisser Moreno
Marsha Solomon
Tino Villanueva
Bill Wolak
Letters to the Editor:
Babette Albin
Chandan Anwar
Mansur Aziz
Laura Boss
Rumana Gani
David Gershator
Caroline Gill
Isaac Goldemberg
Zahirul Hasan
Omar Faruque Jibon
Gholam Moyenuddin
Hasan Sabbir
Subir Sarkar
Tabrish Sarker
Bikul Hossain Rojario
Cover Art:
Ekok Soubir
দীর্ঘজীবি কবিতাপত্রিকা বাংলা কি ইংরেজী ভাষায় কখনো ছিল না এমন নয়। ‘কবিতা’ কি ‘কৃত্তিবাস’ কি ‘Poetry’-র কথা মনে তো পড়েই। শুধু জানা যায় না নিজ
বাসভূমির বাইরে বাঙ্গালী কখনো শুধু কবিতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি পত্রিকা এতো দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ করেছে কি না। ‘শব্দগুচ্ছ’র কৃতিত্ব, সম্মান, গৌরব এখানেই প্রথম।
—জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
|
|
Shabdaguchha: The 15th Anniversary Issue
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
পনেরো বছরে ‘শব্দগুচ্ছ’
এক
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত কবিতার কাগজ ‘শব্দগুচ্ছ’র পঞ্চদশবর্ষ পূর্ণ হলো। এই সামান্য বাক্যটির মধ্য দিয়ে প্রবাসী, মূলত বাংলা ভাষাভাষী, কবিতা-প্রেমিকের যে প্রীতি
ও বিস্ময় স্পষ্ট হওয়া উচিৎ ছিল, সেটি হয়নি। সে জন্যে আরো দু’একটি বাক্য লিখতেই হয়। পনেরো বছর ধরে নিয়মিত একটি কবিতাপত্র প্রকাশিত হচ্ছে নিউইয়র্ক থেকে,
হোক সে যে ভাষায়ই, এটাই এক বিস্ময়। আর যখন জানা যায় যে, এক কবিতাপ্রেমী বাঙ্গালী দম্পতি এই অবিশ্বাস্য কাজটি করে চলেছেন চারপাশের কোনো কিছুর দিকে না-তাকিয়ে,
বিনা পুরস্কারের আশায়, তখন ঐ বিস্ময় আরো বাড়ে। বিশেষত যখন বোঝা যায় যে, ‘শব্দগুচ্ছ’ একটি আন্তর্জাতিক দ্বিভাষিক (বাংলা ও ইংরেজী) কবিতাপত্র হলেও মূলত বাংলা ভাষাভাষী
পাঠকই তার উদ্দিষ্ট তখন ঐ বিস্ময়ের সঙ্গে অপার প্রীতি যুক্ত হয়। ‘শব্দগুচ্ছ’ সম্পাদক হাসানআল আব্দুল্লাহ, সহযোগী সম্পাদক নাজনীন সীমন, অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
দীর্ঘজীবি কবিতাপত্রিকা বাংলা কি ইংরেজী ভাষায় কখনো ছিল না এমন নয়। ‘কবিতা’ কি ‘কৃত্তিবাস’ কি ‘Poetry’-র কথা মনে তো পড়েই। শুধু জানা যায় না নিজ
বাসভূমির বাইরে বাঙ্গালী কখনো শুধু কবিতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি পত্রিকা এতো দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ করেছে কি না। ‘শব্দগুচ্ছ’র কৃতিত্ব, সম্মান, গৌরব এখানেই প্রথম। অন্য বিবেচনা পরে।
দুই
‘শব্দগুচ্ছ’ প্রথম প্রকাশিত হয় ঊনিশশ’ আটানব্বই-এর জুলাই মাসে। ঊনিশশ’ নিরানব্বই-এর জুন পর্যন্ত পরপর চারটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদকও ‘শব্দগুচ্ছ’ ১ম বর্ষ
১ম সংখ্যায় এটাকে ত্রৈমাসিক কবিতাপত্র বলে উল্লেখ করেছেন। সেই হিসেবে অদ্যাবধি ‘শব্দগুচ্ছ’র ষাটটি সংখ্যা প্রকাশিত হওয়া উচিত। হয়েছেও তাই, যদিও একই মলাটে দু’টি
সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। তাই মলাটের সংখ্যা ষাটটি নয়। আরো কম। এই নিবন্ধকার মোট ঊনিশটি মলাটে গ্রন্থিত ‘শব্দগুচ্ছ’র তেত্রিশটি সংখ্যা সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
ধরে নেয়া যায় মোট মলাটের সংখ্যা আরো বেশি। বিষয়টির উল্লেখ করা এই জন্যে যে গত কয়েক বছরে ‘শব্দগুচ্ছ’র বেশ কয়েকটিতে একই মলাটে দু’টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।
আগে মাঝে মাঝে ঘটতো—ইদানীং নিয়মিত। তাহলে কি ‘শব্দগুচ্ছ’ ষান্মাসিক কবিতাপত্র হতে চলেছে? যদি তা-ও হয়, তবুও কবিতাপ্রেমী পাঠক মোটে বঞ্চিত হবেন না,
কিছু কম মলাট হাতে পেলেও। শুধু সম্পাদক যেন ত্রৈমাসিক হিসেবে পত্রিকাটি প্রকাশ করার ভার মাথায় বহন না-করে বেড়ান। যদিও সাম্প্রতিক কয়েকটি সংখ্যায় এটিকে শুধু দ্বিভাষিক কবিতা
পত্রিকা—Bilingual (English-Bengali) Poetry Journal—হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জানি, এই আলোচনা অতি নিরস তবুও প্রাসঙ্গিক এই কারণে যে ‘শব্দগুচ্ছ’ প্রকাশে
প্রকাশক-সম্পাদক কি পরিমাণ শ্রম, মেধা, অধ্যবসায় খরচ করেন তা বোঝা যাবে, আরও বোঝা যাবে এতো কিছুর পরেও নিয়মিত প্রকাশনা বজায় রাখতে কি পরিমাণ উদ্বেগের মধ্যে
দিনরাত্রি কাটে তাঁর। অর্থ সংস্থানের ব্যাপারটি মোটে উল্লেখই করছি না—‘শব্দগুচ্ছ’র প্রথম দিকে দু’একটি বিজ্ঞাপন দেখা গেলেও বেশ কয়েক বছর ধরে অর্থকরী কোন বিজ্ঞাপন সেখানে আর
দেখা যায় না। কি করে অর্থের সংস্থান হয় আমরা জানিনা, হাসানআল দম্পতির ব্যক্তিগত তহবিলই উৎস, তেমনই মনে করি। কবিতার জন্যে আরো কতো দূর যাবেন এঁরা কে জানে।
যদিও আমরা জানি কবিতা প্রকাশনা নেশায় আরো অনেকেরই জীবন কেটেছে এবং এ-ও জানি তাতে তাঁদের কিছু প্রাপ্তিও ঘটেছে। হাসানআল-নাজনীন-এর বেলায়ও এমন কিছু ঘটুক এই আমাদের একান্ত কামনা।
তিন
‘শব্দগুচ্ছ’ তার প্রথম চার বছরে কেবলমাত্র বাংলা কবিতার ত্রৈমাসিক পত্র হিসেবেই নিজের পরিচয় দিত (A Bengali Poetry Quarterly), পাঁচ বছরের শুরু থেকেই পরিচয় সামান্য পাল্টায়।
দ্বিভাষিক কবিতাপত্র—A Bilingual (English-Bengali) Poetry Quarterly—হিসেবে পরিচিত হয়, এবং দীর্ঘকাল ঐ পরিচয়ই বজায় ছিল। গত দু’বছর ধরে ‘ত্রৈমাসিক’ শব্দটি উঠে গেছে।
এখন ‘শব্দগুচ্ছ’ শুধুই দ্বিভাষিক কবিতার সাময়িকী—A Bilingual Poetry Journal—জার্নাল শব্দটির সাথে সময়ের যোগসূত্র আছে বলেই ‘সাময়িকী’ বলা। ‘ত্রৈমাসিক’ থেকে ‘সাময়িকী’তে রূপান্তরের
ব্যাপারটি খুব সহজেই বোঝা যায়—কেবল মনে কিছু কথা আসে ‘বাংলা কবিতাপত্র’ থেকে দ্বিভাষিক কবিতাপত্রে
রূপান্তরের ব্যাপারটি ভাবলেই। সহজেই বলা যায় শুধু বাংলা কবিতা নিয়ে ‘শব্দগুচ্ছ’র পাঠক বা সম্পাদক যথেষ্ট তৃপ্ত ছিলেন না, অথবা বলা যায় পাঠকের সঙ্গে কবিতার বৃহত্তর ভুবনের পরিচয় করানোই উদ্দেশ্য ছিল। অথবা এই-কি যে বাঙ্গালী পাঠকের জন্যে কেবল বাঙলা কবিতাই যথেষ্ট নয়, পরিচয় হওয়া প্রয়োজন তার ইংরেজি ভাষার কবিতাচর্চার সঙ্গেও? ইংরেজি ভাষার কবিতার সঙ্গে পরিচয় না-হলে, অন্তত অনুবাদের মাধ্যমেও, বাঙ্গালী কবির রচনার হাত তেমন খোলতাই হবে না, এই বুঝি ভাবনা। হয়তো ঠিক। যদিও অনুমান করি, স্বদেশী নব্য কবিদের চাইতে প্রবাসী নব্য কবিদের ইংরেজি জ্ঞান কিঞ্চিৎ অধিক। অথবা না-ও হতে পারে। সে কথা থাক।
উল্টো দিক থেকেও ব্যাপারটি দেখা যায়। হয়তো ব্যাপারটি এমন যে ইংরেজি ভাষার কবি বা কাব্যপাঠকদের সঙ্গে বাংলা ভাষার কবি বা কবিতার পরিচয় করিয়ে দেয়াই ‘শব্দগুচ্ছ’র অন্বিষ্ট। নিঃসন্দেহে অতি প্রশংসাযোগ্য উদ্যম। যদিও আমরা জানি অতি গুণান্বিত ইংরেজি অনুবাদ ব্যতীত বাংলা কবিতার বৈভব কি স্বাদ ভিন্নভাষীর কাছে পৌঁছানো বড়ই কঠিন। অদ্যাবধি এই ব্যাপারে কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের কথা আমরা জানি না। সবচেয়ে বড় কথা ইংরেজি ভাষাভাষী কবিতাপাঠক যেহেতু বাংলা ভাষায় মুদ্রিত কবিতা পাঠে অক্ষম তাহলে অনূদিত বাংলা কবিতাটির মূল পাঠটি কি মুদ্রণ করবার কোনো প্রয়োজন আছে? অনূদিত ইংরেজি মূল পাঠ প্রকাশ করার অবশ্য যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। কেননা প্রবাসী বাঙ্গালী কবিতাপাঠক অথবা বাঙ্গালী কবিতা পাঠকের বৃহদাংশই ইংরেজী ভাষার কবিতা পাঠে সক্ষম। তারও চেয়ে আরো অনেক বড়ো একটি প্রশ্ন এখানে উত্থাপন করা যায়—কেবল ইংরেজি ভাষাভাষী ‘শব্দগুচ্ছ’র পাঠকসংখ্যা কি পরিমাণ? আমি ঠিক জানি না, তবে অনুমান করি অতি সামান্য।
সম্প্রতি ‘শব্দগুচ্ছ’র পৃষ্ঠায় ইংরেজি ছাড়াও অন্যভাষার কবিতাও প্রকাশিত হয় নিয়মিত। এটিও অতিপ্রশংসাযোগ্য। ইতালিয়ান কি স্প্যানিশ কবিতার বাংলা অনুবাদ, যদিও ইংরেজী অনুবাদ থেকে বাংলায় অনূদিত, বাংলা কবিতা পাঠকের সামনে কবিতার জগতের সীমা অনেক বাড়িয়ে দেয়, বলাই বাহুল্য। সমস্যা কেবল এই যে স্প্যানিশ কি পোলিশ, কি ইতালিয়ান কবিতার হৃদয়ের যথার্থ সুরটি ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে বাংলায় অনূদিত পাঠে কি আদৌ ধরা পড়ে? এ-সম্পর্কে অনেক কথা আছে জানি। তবুও আমরা বলি যে, মূল ভাষা থেকে বাংলায় অনূদিত কবিতা পাঠে যে স্বাতন্ত্র্য আসে ইংরেজি অনুবাদ থেকে অনূদিত পাঠে আদৌ তেমন আসে না। এ-রকম চিন্তানুসারী সমালোচক সহজেই বলবেন যে, বাংলায় অনূদিত ইংরেজি কবিতার পাঠটি মুদ্রণের যুক্তি যদিও-বা খুঁজে পাওয়া যায়, ইংরেজিতে অনূদিত বাংলা কবিতাটির মূল পাঠ মুদ্রণের কোনো প্রয়োজন আছে বলে ধরে নেয়া যায় না। যদি-না আমরা মেনে নেই যে, প্রকাশিত ইংরেজি অনুবাদের সব পাঠকই তো বাংলাভাষী—তাঁরা চাইলে ইংরেজির পাঠের সঙ্গে বাংলা অনুবাদটি মিলিয়ে দেখবেন এবং তৃপ্ত হবেন অথবা অনুবাদ যথার্থ নয় বিবেচনায় অনুবাদকের নিন্দা করবেন। যে-কোনো বিচারেই ‘শব্দগুচ্ছ’র সমস্ত পাঠককে তাই বাংলা ভাষাভাষী হতে হবে, অন্তত তারা বাংলা ভাষা পাঠে ও হৃদয়ঙ্গমে সক্ষম হবেন। এই বিবেচনায় দ্বিভাষিক পত্রিকা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার সীমানা খুবই সংকীর্ণ হয়ে আসে।
তবুও হাসানআল আব্দুল্লাহ বাংলা থেকে ইংরেজি এবং পরে আরো নানা ভাষার কবিতা ‘শব্দগুচ্ছ’-এ সন্নিবেশিত করেন সেটি তাঁর পাঠককে ভিন্ন ভাষার কবিতার জগতে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই। হয়তো সেটি পরিপূর্ণ গুণান্বিত নয়, তৃপ্তিকর নয়, তবুও ভিন্ন কবিতার জগতে তো পাঠক প্রবেশ করবেনই।
‘শব্দগুচ্ছ’-এ প্রকাশিত বাংলা কবিতার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করবার ব্যাপারেও উপরোক্ত যুক্তি (অথবা কুযুক্তি) প্রয়োগ করা চলে। সব পাঠকই যদি বাংলা ভাষাভাষী তাহলে আর বাংলা কবিতার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করার প্রয়োজন কি? এজন্যে চাই ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠক যাঁরা ‘শব্দগুচ্ছ’র পৃষ্ঠা উল্টাবেন অন্তত।
চার
‘শব্দগুচ্ছ’র প্রথম সংখ্যা পরিপূর্ণভাবে বাংলা কবিতার প্রতিই নিবেদিত ছিল। ঐ সংখ্যায় প্রকাশিত নাতিদীর্ঘ সম্পাদকীয়টি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। যাঁদের ঐ রচনাটি পাঠ করবার সুযোগ হয়নি, অথবা যাঁরা ঐটির কথা ভুলে গেছেন তাদের জন্যে নিচে সম্পাদকীয়টি পূর্ণ উদ্ধৃত করছি। এই সামান্য কিছু কথার মধ্যেই হাসানআল আব্দুল্লাহ পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য ও তাঁর কাব্যদর্শন স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছেন।
ঢাকা, কলকাতা ও বিদেশের মাটিতে বাংলা সাহিত্যচর্চা হচ্ছে খুব জোরেশোরেই। বের হচ্ছে লিটল ম্যাগাজিন ও বড়ো বড়ো পত্রিকায় সাহিত্য পাতা। নবীন, প্রবীণ উভয় দলের কবিতাই ছাপা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ যাচাই না করে মুখ চিনে বা দল ভারি করার জন্যে ছাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ভুরি ভুরি কবিতা। একদিকে তাই কিছু পত্রিকায় নবীনদের অবজ্ঞা অন্যদিকে হালের কেউ কেউ এর উত্তর দিতে স্ববলয়ের তরুণদের কবিতা ছাপানোর মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতির বহর বাড়িয়ে চলেছেন। ‘আমরা সবাই রাজা’র দেশে আমরা সবাই কবি হয়ে গেছি এদের উত্থানে। ফলে যেমন কিছু ভারি নামের নিচে কালের চর্বিতচর্বণ স্থান পাচ্ছে, তেমনি অনেক আনকোরা নামের নিচেও দেখা যাচ্ছে নাবালক শব্দ চয়নে উঠে আসা কাঁচা কবিতার আস্ফালন। কেউ কেউ উঠে আসলেও দখলদারিত্ব স্থাপনে ব্যস্ত রয়েছেন অনেকেই। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সম্পাদক কিন্তু গুণবিচারের মাপকাঠি থাকছে না এবং বুদ্ধদেব বসু বা শিবনারায়ণ রায়ের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। ক্ষতি হচ্ছে বাংলা কবিতার। পিঠ চাপড়ানো সমালোচনা পঞ্চাশ পরবর্তী কবিতাকে লতার মতো বেড়ে যেতে সাহায্য করছে ঠিকই, শক্তিশালী মহীরুহের মতো দাঁড় করাতে পারছে না। তবে এ নিয়ে হতাশার দিগন্তেও ভাসার কিছু নেই। যুগ সঞ্চালনে সত্যিকার কবি বেরিয়ে আসবেনই।
সবার জন্যে দুয়ার খুলে দিয়ে আমরা এগিয়ে আসছি। আজকের তরুণতম কবিও যদি একটি ভালো কবিতা রচনা করেন তার স্থান ‘শব্দগুচ্ছ’র পাতায়; বড়ো বড়ো অঙ্গিকার না রেখে এ প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হোক।
রচনার শেষ অংশটি পড়বার পর অপরিমেয় প্রত্যাশা ও আনন্দে বাংলা কবিতার পাঠক যে বোধে আপ্লুত হন সেটি প্রায় অবর্ণনীয়। “সবার জন্যে দুয়ার খুলে দিয়ে আমরা এগিয়ে আসছি। আজকের তরুণতম কবিও যদি একটি ভালো কবিতা রচনা করেন তার স্থান ‘শব্দগুচ্ছ’র পাতায়; বড়ো বড়ো অঙ্গিকার না রেখে এ প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হোক।”
পনেরো বছর আগে সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল। ‘শব্দগুচ্ছ’ তার দরজা খুলে দিয়েছিল সব কবিদের প্রবেশের জন্যে—কেবল নতুন কবিদের জন্য নয়। তার অন্বিষ্ট ছিলো ভালো কবিতা প্রকাশ করা। বিশেষত নতুনদের। এই পনেরো বছরে ষাটটি সংখ্যায় (যে ক’টি মলাটেই হোক না কেন) ‘অজস্র’ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে—যেমন প্রবীণদের তেমনি নতুনদেরও। যদিও ঐ সম্পাদকীয় পাঠে মনে হয় ‘শব্দগুচ্ছ’র দরজা বুঝি খোলা হলো নবীনদের জন্যেই। মূলত নতুনদের জন্যে হলেও ‘শব্দগুচ্ছ’র পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয় অনেক প্রবীণ কি প্রতিষ্ঠিত কি পরিচিত কি খ্যাত কবিদের রচনাও। যেমন প্রথম সংখ্যায় শহীদ কাদরী ও জ্যোতির্ময় দত্ত ব্যতীত প্রায় আর কেউই বাংলা কবিতা পাঠকের কাছে যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন না। ‘শব্দগুচ্ছ’র সর্বশেষ সংখ্যাটিও (Volume 15, No. 1/2) প্রায় তেমনি—বিদেশী কবিদের অনূদিত রচনা সমূহ বাদ দিলে পনেরো বছর আগের অতি প্রতিষ্ঠিত কোনো কবির রচনাই চোখে পড়ে না। অবশ্য প্রকাশিত রচনাসমূহের মাত্র এক চতুর্থাংশই বাঙালী। পনেরো বছরে ‘শব্দগুচ্ছ’র চরিত্রের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বুঝি এটিই। পরিপূর্ণভাবে বাংলা কবিতায় নিবেদিত ‘শব্দগুচ্ছ’ এখন বহুলাংশে সরে এসেছে বিদেশী কবিতার আঙ্গিনায়। যদিও মধ্যবর্তীকালে ‘শব্দগুচ্ছ’য় প্রকাশিত কবি তালিকায় বাংলা ভাষার পরিচিত কি খ্যাত অনেক কবির রচনাই মুদ্রিত হয়েছে। স্পষ্টতই ‘শব্দগুচ্ছ’ তার প্রারম্ভিক ঘোষিত চরিত্র ‘বাংলা কবিতার ত্রৈমাসিক পত্রিকা’ থেকে দ্বিভাষিক কবিতা সাময়িকীর বর্তমান চরিত্রে স্বচ্ছন্দে পরিবর্তিত হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় রচিত কবিতার আধিক্যও চোখে পড়বার মতোই, যদিও প্রকাশের বছর দুয়েকের মধ্যেই ‘শব্দগুচ্ছ’ তার শেষ মলাটে ওই সংখ্যায় প্রকাশিত সব রচয়িতার নামই ইংরেজি হরফে মুদ্রিত করতে থাকে। অদ্যাবধি তেমনই আছে। স্বচ্ছন্দেই মনে করা যায় যে, ‘শব্দগুচ্ছ’র উদ্দিষ্ট পাঠক অনেক বেশি ইংরেজিনবিশ হয়ে উঠেছে কালে কালে অথবা এ-ও বলা যায় যে, ইংরেজি ভাষাভাষী কবিকুল কি কাব্যোৎসাহীরা যেন ঐ সংখ্যায় প্রকাশিত কবিকুলের নাম স্বচ্ছন্দে পড়তে পারেন। অনেক ইংরেজী ভাষাভাষী পাঠকের হাতে হাতে ‘শব্দগুচ্ছ’ ঘুরতো যদি তাহলে সম্পাদকের নীতি কি কৌশল সম্পূর্ণ সফল বা প্রশংসনীয় বলে মনে করা যায়। ভিন্ন ভাষাভাষী পাঠকের হাতে হাতে ‘শব্দগুচ্ছ’ ঘুরে বেড়ায় কিনা অথবা বৈদ্যুতিক আলোকনিচয়ে পরিবেশিত ‘শব্দগুচ্ছ’ কি পরিমাণে অন্য ভাষাভাষী দ্বারা পঠিত, জানা নেই; এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা সমীচিন নয়।
পাঁচ
‘শব্দগুচ্ছ’ সম্পাদক হাসানআল আব্দুল্লাহ কেবল কবি নন—তিনি গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক এবং তাঁর এক বড় পরিচয় তিনি ছান্দসিক। বাংলা কবিতার ভুবনে তিনি পরিচিত নিশ্চয়ই, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষত নিউইয়র্কের ভিন্ন ভাষাভাষী কবি সমাজেও তাঁর পরিচিতি ঈর্ষণীয়। স্বভাবতই ‘শব্দগুচ্ছ’ সম্পাদনা কালে তাঁর কাব্যবোধ, রুচি, কাব্যদর্শন ও চাই কি জীবনবোধ কি জীবনদর্শনও পরিপূর্ণ ভাবে ক্রিয়াশীল থাকে। মানহীন কোনো রচনাই ‘শব্দগুচ্ছ’র পৃষ্ঠায় স্থান পায় বলে মনে হয় না। তবুও নবীন কবিদের রচনা নির্বাচনে সর্বদা কঠিন সম্পাদকীয় বিচারকাঠি প্রয়োগ করা চলে না, এটি বোধগম্য। এ-কারণে প্রকাশিত কবিতাসমূহের গুণাগুণ বিচার অনাবশ্যক। কবিতায় ব্যবহৃত চিত্রকল্প, রূপকল্প, উপমা, উৎপ্রেক্ষা কি ছন্দ প্রয়োগের নানা বিবেচনায় কবিতার গুণাগুণ বিচার প্রকৃতই অর্থহীন। সেটিই ভালো কবিতা যেটি পাঠকের কাছে ভালো লাগে, তার হৃদয়ে স্থান পায়। তাই প্রকাশিত কবিতার গুণাগুণ বিচার ‘শব্দগুচ্ছ’র পাঠকের হাতেই থাকুক। সম্পাদক তো সর্বদাই তার সাহায্যে উন্মুখ হয়ে আছেন।
কলারডো
|
|