|
Editorial
এটি শব্দগুচ্ছ পত্রিকার নবম বর্ষের শেষ সংখ্যা। তার মানে আগামী সংখ্যার ভেতর দিয়ে আমরা দশম বর্ষে পদার্পণ করছি। একটি কবিতা পত্রিকার জন্যে এটি হয়তো বড়ো পাওয়া হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। অন্ততঃ আমি তাই মনে করি।
শব্দগুচ্ছ শুরু হয়েছিলো কবিতার ক্ষেত্রে একটি বড়ো বাধাকে অতিক্রম করার প্রয়াসে। সেটি হলো এই মুহূর্তে বাংলা ভাষায় এমন একটি কবিতাপত্র নেই যেখানে একজন তরুণ কবি লেখা পাঠিয়ে সুবিবেচনার আশায় বসে থাকতে পারেন—লেখাটি কবিতা হিসেবে উত্তীর্ণ হলে ছাপা হবে আর মনোনীত না হলেও জানতে পারবেন। সাথে সাথে হয়তো কিছু দিক নির্দেশনা পেয়ে যাবেন; যদিও আমাদের ধারণা কোনো উপদেশই ভালো কবিতা রচনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবুও প্রাথমিক ভাবে সব তরুণকেই কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একটি ভালো পত্রিকার সংস্পর্শে এসে তাই হয়তো নবীন লেখক সম্প্রদায় কিছুটা হলেও উপকৃত হন। কিন্তু এই মুখ-চেনা-বন্ধুত্বর জগতে এমনটি দেখা যায় না। ব্যাপারটি এমন যে পরিচিত না হলে লেখা যতো ভালোই হোক প্রকাশিত হবে না। আর পরিচিত হলে জগাখিচুড়ি আবোল তাবোলও নির্দ্বিধায় উৎরে যাবার সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে। এমতাবস্থায় শব্দগুচ্ছ জেনে শুনেই একটি কঠিন কাজে হাত দিয়েছিলো। যদিও প্রকাশিত হয় ভৌগোলিক ভাবে বাংলা মুল্লুকের অনেক দূর থেকে, তথাপি এ পত্রিকা জন্মকালীন উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে নিয়মিত হাঁটছে। তাছাড়া অনুবাদের মাধ্যমেও পুর্ব পশ্চিমের সেতু নির্মাণ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচেছ। ফল স্বরূপ নিউইয়র্কের কুইন্স শহরের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, “শব্দগুচ্ছ কবিতার মাধ্যমে পুব ও পশ্চিমের মাঝে সেতু নির্মাণ করেছে।”
ফলত যতোই দিন যাচ্ছে আমাদের কাজ ততো বেশী বাড়ছে বলেই ধারণা করি। কারণ, সেতু নির্মাণ করা যায়, কিন্তু তাকে ধরে রাখতে নিয়মিত পরিচর্যার দরকার হয়। সেই চাহিদা পূরণে যে পরিমাণ অনুবাদ দরকার তা কোনো ভাবেই সুলভ নয়। প্রাপ্ত অধিকাংশ অনুবাদ ছাপার অক্ষরে দেখার অনুপযোগী। বিশেষত বাংলাদেশ ও ভারত থেকে কবিতার যে সব অনুবাদ বের হয়, বা যারা অনুবাদ করেন—জানি নিজেদের সমাজে তাদের সুনাম যারপরনাই অনেক—কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে সিংহভাগ অনুবাদই বহির্বিশ্বের পাঠকদের জন্যে প্রকাশ যোগ্য নয়। তারপরও অনুবাদ সম্পাদনা ও নিয়মিত এর মান উন্নয়নের জন্যে বেশ ক’জন মার্কিন কবির সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি। এ ছাড়াও ইংরেজী ভাষায় রচিত কিছু কবিতাও নিয়মিত ছাপা হচ্ছে। তাই বাংলা ও ইংরেজী কবিতা, মূল ভাষা ও অনুবাদে, আগ্রহী পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছে শব্দগুচ্ছ। গত নয় বছরে বেশ কিছু তরুণ কবির—বাঙালী ও আমেরিকান—প্রথম কবিতাটি ছাপার কৃতিত্বও রয়েছে পত্রিকাটির। এটি আমরা ধরে রাখতে চাই।
|