|
Poetry in Bengali/বাংলা কবিতা
|
|
নাজনীন সীমন
ব্যর্থতা
ব্যর্থতা
অথচ বলতে পারিনি কিছুই
এতোদিন―
অবলীলাক্রমে লুটে নিয়ে গেলো আমার উঠোন
থেকে রজনীগন্ধার সুগন্ধ, সফেদ আনন্দ
পুকুরের টলটলে জল, খলখল করা মাছেদের
রুপালী ঝিলিক, গাছের শাখায় বাবুইয়ের
ঘর, মৌমাছির চাক, পিঁপড়ের বাসা
সরষের ক্ষেতে জমানো হলুদ
আঙিনায় জ্যোৎস্নার গড়াগড়ি
অমাবস্যার নিকষ ঘন অন্ধকার
উত্তপ্ত নিঃশ্বাস, ধরে থাকা হাত
স্পর্শের ব্যাকুল আহ্বান
নৈবেদ্যর ডালা―সব কিছু লুট হয়ে গেছে।
পড়ে আছে কেবল নিঃসঙ্গ পরিভ্রমণের সুদীর্ঘ কাহন;
তবু
বলতে পারিনি কিছুই কাউকে কখনো...
একফালি স্বাধীনতা
থৈ থৈ আনন্দ, কোলাহলমুখর সময়,
নির্জনতার চাদর, ঐশ্বর্যের ঝলমলে আলোর ফোয়ারা,
ভালোবাসার মিহিন চাদর―কিছুই চাইনা।
প্রয়োজন নেই প্রেমের নিবিষ্ট বন্ধন,
উষ্ণতার কুমকুম স্পর্শ, বিলাসিতার বিবিধ আয়োজন,
সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, বীমার নিশ্ছিদ্র শর্তাবলী।
আলিঙ্গন চাইনা, লিখিত কোন নিরাপত্তা নয়,
চাইনা খ্যাতির শীর্ষাবস্থানের নিভাঁজ আনন্দ;
প্রশংসার ঝড়, সনদ, পদক―কিছুই চাইনা।
সূর্যের রশ্মির মত,
প্রজাপতির ডানার মত,
ঝমঝম বৃষ্টি, বিদ্যুৎ চমক,
ঝরনার ধেয়ে নামা, মৌমাছি কি
পিঁপড়ের প্রত্যয়ী পরিশ্রম,
ঘাসের উপর জমে থাকা রাতের শিশির,
ধানের শীষের সোনা রঙ,
মাছের রুপালী ঝিলিক, লেজের দাপট, অথবা
গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে কাটা তরমুজের মতন
এক ফালি স্বাধীনতা চাই শুধু ...
আহ্বান
এইভাবে অগ্রসর হই গন্তব্যের দিকে।
যদিও দিনান্তে নিঃসঙ্গতার ধারালো ছুরি ভোঁতা
হয়না এতোটুকুও, ভেঙে পড়ে সুনসান সময়ের ধারা
নন্দিত শিকলে বাঁধা আমাদের যত
শুভ আর অশুভ আবর্ত।
বিরান ভূমিতে প্রায়শই একা,
কদাচিৎ প্রিয়মুখ সাথী হয় সুগম রাস্তায়―
তথাপি বাড়াই হাত: “যাবে তুমি?”
সব ভেঙে গেলে
বাঘ, সিংহ, নেকড়ে, কুমির, হাঙর কি সাপের কামড়
থেকে বাঁচা অসম্ভব নয়, হরদম মানুষ বিক্ষত হয়েও আসছে
ফিরে; কিন্তু মানুষের সুসভ্য মুখোশ পরা
জানোয়ারের ভয়াল আঁচড় রক্তাক্ত, ছিন্নভিন্ন করে সব
ন্যূনতম চিন্তা ছাড়া খোঁড়ে খেদের কবর
অস্থি মাংশ টুকরো টুকরো ছড়ায় এখানে সেখানে
যত্রতত্র; আর ফুঁসে তেড়ে আসে চেটেপুটে খেয়ে নিতে
যাবতীয় সব আহ্লাদ এবং ঝুলে থাকা আশার কিনার
তথাপি আমরা ফুলে ফুলে সাজাই এদের বাসর
হয়তো অনিচ্ছাতেই, অথবা স্বপ্নের দায়বদ্ধতায়।
সব ভেঙে গেলে দ্রুত এগোয় মুখোশী মানুষ নতুন শিকারে
দুঃখের সানাই বাজায় অনির্ধারিত ভবিষ্যত আমাদের
বিকারহীন হাতড়ে চলা সময়ের সায়ান ...
নিউইয়র্ক
উদয় শংকর দুর্জয়
একজন শান্ত সুবোধ সঙ্গী চাই
ক্লান্তিতে হেলান দেবার জন্য
একজন শান্ত সুবোধ সঙ্গী চাই।
বুকের এই আকাশ শূন্যতা, অবিরাম বিরহী জলধারা
একটু ভাগাভাগি করার জন্য
একজন সঙ্গী চাই।
যে আমার সবক’টা ভুলকে শতদল ভেবে নেবে
শুধরে দেবে অক্ষর বর্ণমালা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা―
আবার হাতে খড়ি দেবো, পরিশুদ্ধ হবো,
শেখাবে ধ্বনিপুঞ্জ অনন্ত সত্য আর মহাবাণী মহাকালের।
এমন একজন সঙ্গী চাই―যে আমার
অপরাধের বাড়ন্ত দিগন্তকে ছোট করে দেবে
দেখাবে ফুল ঝরা পথ, সোনা মাখা ছেলেবেলা।
আমি সব অপরাধের হিসাব ফেলে তুলে নেবো
ফুল পাতা অঞ্জলি আর স্বর্ণদ্বীপের আহ্বান।
এমন একজন সঙ্গী চাই
যে আমার যন্ত্রণার পাখিটিকে গুলিবিদ্ধ করে
প্রশান্তির একপশলা বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেবে,
হাত ধরে নিয়ে যাবে কৃষ্ণচূড়ার কাছে―
কোন বকুল ঝরা পথে, কোন রূপোলী জ্যোৎস্নার কাছে।
ক্লান্তিতে একটু হেলান দেবার জন্য একজন সঙ্গী প্রয়োজন
যে আমাকে দুঃস্বপ্নের প্রতিটি রাত থেকে বাঁচাবে
অক্সিজেন দেবে বিনে পয়সায়।
তোর জন্য
তোর জন্য খোলা রেখেছি সদর দরজা
সারাটা রাত অন্ধকার পাহারা দিয়েছি
মোমের আলো যখন শেষ? তখন চোখের আলো জ্বেলেছি
টেবিল চেয়ারে মন রেখেছি বেঁধে।
তুই আসবি বলে ঐন্দ্রিলাকে দিয়ে মালা গেঁথেছি,
বকুল তোর ভীষণ প্রিয়; জানি।
উত্তর পাশের কামরাটা তোর জন্য
ঝেড়ে মুছে সফেদ পরিষ্কার―
সাথে জানালার পর্দাগুলোতে নতুন রং
কিছু রজনীগন্ধা ফুলদানিতে, মা’র হাতে ফুল তোলা বিছানার চাদর,
নরম তোষক আর পাশের বালিশ―যা একান্ত প্রিয়।
বিশ্বাস র্ক, কৃত্রিম কিছু রাখিনি।
তোর জন্য ঐন্দ্রিলাকে দিয়ে
কালি জিরার পায়েস আর দই পেতেছি
জলপাই আচার, আমসত্ত্ব
স্বাদটা―তুই আসলে একসাথে নেবো। তোর
প্রিয় পিঠাগুলোর কথা ঢের মনে আছে―
সব হবে।
তোর জন্য উপোস রেখেছি
অপেক্ষার সাথে উপবাসের দারুণ মেল বন্ধন।
তোর জন্য উঠোনের উঁচুনীচু যা ছিল?
আমার বুকের মত সমতল রেখেছি।
রাস্তার দু’পাশে রক্ত গাঁদার সারি
ডালিয়া, সূর্যমুখি―রেখেছি উঠোনের এক পাশে।
সিঁড়িতে টাইম ফুলের লুকোচুরি
টবে ঝুলোনো তোর প্রিয় লজ্জাবতী
তোর স্পর্শে হবে আরক্ত।
তোর জন্য খোলা বিস্তীর্ণ সবুজে মোড়ানো মাঠ
যতদূর দৃষ্টি যায়। তুই দৌড়ে পালাবি?
আমি লাটাই-ঘুড়ি নিয়ে ছুটবো তোর পিছে,
এই পড়ন্ত বিকেলগুলো ধার নেবো প্রকৃতির কাছ থেকে
যা শুধুই তোর জন্য।
তোর জন্য বিশাল আকাশ-নক্ষত্রের বসবাস।
বসন্তের রেখে যাওয়া স্পর্শ, নতুন পাতা
সংগ্রহে রেখেছি―প্রিয় কবিতা কথামালা এইসব
রেখেছি তোর জন্যে।
লন্ডন
মনসুর আজিজ
জাতিসংঘের হৃদপিণ্ড
জাতিসংঘের হৃদপিণ্ড বদল করে
পেসমেকারের মতো বসিয়ে দিতে চাই
একটি আন্তর্জাতিক বিবেক
মরণোত্তর চোখ দুটোতে আমার শৈশবের মতো
নির্মল প্রকৃতি দেখবে পৃথিবীর মানুষ
অহিংস দৃষ্টিতে জাতিসংঘ মেলে দেবে
বহুবর্ণিল প্রজাপতি পাখা
বিধ্বস্ত দেশের শিশুরা নাচবে তার সাথে
আমেরিকার পেট থেকে বের হবে কৃষ্ণচূড়া গাছ
পারমাণবিক অগ্নিশিখার পরিবর্তে
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়বে লাল পাপড়ি
কালো ধোঁয়ার পরিবর্তে পৃথিবীর আকাশে
দেখবো সাদা মেঘের গোল্লাছুট
রঙিন ঘুড়ি ওড়াবে ইহুদি শিশুরা
মদিদ ছন্দের গান গাইবে ফিলিস্তিনের পথে পথে
জাতিসংঘের চোখ দুটোতে বসিয়ে দিতে চাই
একজোড়া ফ্ল্যাশলাইট
প্রান্তিক গ্রামগুলো আলোকিত হবে নতুন এক সূর্যের আগমনে
ঢাকা
নাসের হোসেন
আছে
স্বপ্নে ঠিক সামনেই অপেক্ষা করে আছে
একটি কালো পর্দা
পর্দা সরালেই দেখি কেউ নেই
অথচ সে আছে, আছেই
আমি জানি সে শুধু আমার সঙ্গে কথা বলার জন্যে
সহস্রকাল ধরে অপেক্ষা করে আছে।
কলকাতা
রাসেল আহমেদ
১.
কর্নেলকে মনে রেখেছিলেন তিনি, কর্নেল তাকে মনে রাখে নি। আশ্চর্য সত্যের মত আমরা কেউই কাউকে মনে রাখি না। রাজাবাজারের বাড়িটাতে আঙুল দেখিয়ে কেউ বলে নি, ওখানে সাগর থাকে, ওখানে রুনি থাকে, কেউ বলে নি, ওখানে মেঘ থাকে, সর্বস্ব খোয়া গেছে তার, মেঘের...
তাহার মৃত্যুর পর এখন সবাই বলে, ওই দেখ, রাজাবাজারের বাড়ি, ওখানে সাগর ছিলো, রুনিও ওখানে ছিলো, মেঘ ভেসে বেড়ায় ওখানে―
কতদিন ভেসে বেড়াবে মেঘ?
কর্নেলকে তিনি মনে রেখেছিলেন, আমরা তাকে মনে রাখতে পারি নি!
২.
ধুলোপড়া-মলাটছেঁড়া-ধূসর বই; এই বইটি সাগর লিখেছিলেন, এই বইটি মেঘের পিতা লিখেছিলেন, যার শরীরে পঁচিশটি আঘাত, যাকে জবাই করা হয়েছে, যে যুবক মেঘকে জন্ম দিয়েছিলেন, যে যুবক রুনিকে ভালোবেসেছিলেন, যে যুবক একদিন কর্নেলকে মনে রেখেছিলেন।
৩.
হাতের রক্তের দাগ মেঘের মায়ের, পায়ের রক্তের দাগ মেঘের পিতার, যে যুবক রাজাবাজারে সংসার পেতেছিলেন একজন যুবতীর সাথে, যে যুবক একদিন উপন্যাস লিখেছিলেন―কর্নেলকে আমি মনে রেখেছি―যে যুবক আরো অসংখ্য বই লিখতেন, যে যুবক ঘুমিয়ে আছেন শরীরে পঁচিশটি দাগ নিয়ে...
সে যুবক কর্নেলকে মনে রেখেছিলেন।
কর্নেলকে তিনি মনে রেখেছিলেন, আমরা তাকে মনে রাখতে পারি নি!
ঢাকা
হাসান সাব্বির
নির্ঘুম নিশিপোকা
হরিণ-রাত্রির পৃথিবীতে ঢুকে পড়ে কেউ
শুনি নিশিরাতের মোহিনী স্বর।
আমরা যারা কল্পনার পরাবাস্তব খুলির
ভেতর রেখে দিয়েছি অজস্র বিনিদ্র রজনী
নিত্য তাদের কানে বাজে কাঁচভাঙা
নিশিরাতের সুরেলা কন্ঠ―কন্ঠের সোনালী
নিমন্ত্রণ। কেউ কেউ প্রেমে পড়ে অমন
রাত্রির সুরভিতে পাগল হই―হেঁটে
যাই...
অতঃপর মরীচিকার পথ হেঁটে কামনার
আগুন-পৃথিবীতে মরে পড়ে থাকি অজস্র
নির্ঘুম নিশিপোকা অর্থহীন―অকারণ।
অসহায়ত্ব
শুন্যতাবোধের আকাশ, উড়ে যাচ্ছি পাখির
ডানায়...। কোথায় যেন স্বপ্ন আমার ভাঙা
কলস! কোথায় যেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে
হয়ে মরে থাকল মন―কোথায় যেন নির্বাক
কণ্ঠ। জ্বলে জ্বলে নিভে যাচ্ছি―নিভে নিভে
শেষ হয়ে যাচ্ছি।
কী ভীষণ যন্ত্রণার এই দেহপ্রকৃতি, পৃথিবীর
কাঠিন্য !
মাগুড়া
তুষার প্রসূন
একটা খেয়াল একাধিক যন্ত্রানুষঙ্গ
একটা খেয়াল একাধিক যন্ত্রানুষঙ্গ সবকিছু মিলে ধ্বংসের গান হয়, সৌরমণ্ডলের মত একটা বিরহকাব্যের কনসেপ্ট, যা লিখতে হবে আমাকেই। তাই, খণ্ডিত মেধায় শিকড়বৃত্তে চাইছি তোমার সমান করে নাও। সঙ্গম হবে তোমার সাথে। না চাইব পৃথক নারী, না বিস্তীর্ণ অরণ্য, না সমুদ্র―সবই তো তোমার ভুলের ছাপচিত্র―অহেতুক কাঁধে নিয়ে বয়ে চলা একটা কালচে সরাই গ্রামের দিকে...প্রতিদিন...
এবার বাঁক নিয়েছি―ওই গ্রামে এখন বোধহীন বিড়ম্বনা, সেখানে অন্নপূর্ণার পরিবার খালি হাতে বেড়াতে আসেন, ঝোলায় রাখেন অসীমের দরপত্র, মুখে রাখেন আখেরী মুনাজাতের শৈল্পিক গভীরতা। বয়স না বাড়তে বাড়তে প্রতিদিন নবজাতক হয়ে নিয়তির কোলে দুধপানরত, নিষ্পাপ। ক্ষুদ্র হয়ে যাবার আপেক্ষিক অক্ষরবৃত্তে ঘুরছি...গ্রহ-নক্ষত্রের চতুর মাত্রায় আর কত ঘোরানোর ইচ্ছা পুষে রাখ?
উপনয়ন
উপনয়নের সুতো ধরে যজ্ঞের ধোঁয়া গিয়ে মিশেছে শিরা উপশিরার অন্ধপ্রদেশে, উদ্দেশ্য শুধু এইটুকু জানা―কোন শিরার নাশকতায় শরীর আজ এমন দিকচিহ্নহীন মেরুকরণে অঙ্কন করে চলেছে নির্লিপ্ত রক্তধারা। আমরা তো সেই কবে থেকে পাহারা দিয়ে চলেছি প্রতœতাত্ত্বিক মিউজিয়াম, কাছের জনকে কাঁচের ঘরে ঢেকে রেখেছি, আত্মপ্রতিকৃতি এঁকে রেখেছি নতজানু পলস্তারার সীমানা জুড়ে। এখনো লংমার্চে মগ্ন মহাকালের মিছিল, ঘুরে ঘুরে একই ঘূর্ণিঝড়ে আহত ঢুকে পড়ি কোন না কোন সীমান্তঘেঁষা খেলাঘরে। ঝরণাকলম কখনও পরাজিত হয় না বলে যা লিখি তা-ই হয়ে যায় কোন না কোন বন্দীশিবিরের মুক্তিহীন শব্দবন্দনা।
প্রার্থনা কবুল হয়না বলে কখনও কি থেমে থাকে মহামহিম আত্মার দীর্ঘ আয়ুষ্কামনা?
শ্যামল দাষ
সময়, তুই একটু দাঁড়া
আমি সময়কেও বুঝিয়ে বলতে পারি
তুই একটু দাঁড়া, আমি তৈরি হয়ে নি ।
এই হয়ে গেলো প্রায় আর সামান্য বাকী
তারপর তোর কাছেই খুলে বলবো সব ।
সেদিন তেল ফুরিয়ে গেলে, অত দূরের পথে
আমিও কি সঙ্গ দেইনি তোকে? দিয়েছি তো !
মনে নেই? সেবার রাত্তিরে খুব ঝড় হয়েছিলো
মড়াৎ মড়াৎ ভেঙে পড়ছিলো প্রাচীন বৃক্ষের ডাল
তোরও তো জ্বর এসে গিয়েছিলো ভিজে বৃষ্টিতে ।
আমি বদ্যি ডেকে কতো সাধ্য সাধনায় শেষে
তুইই তো আমার কাঁধে ভর দিতে দিতে ওই
ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের পথ পেরিয়ে
কি অসম্ভব সম্ভাবনায় গ্রাম শুদ্ধ লোকেও
নেকড়ের মতো কঠিন শীত থেকে রক্ষায়
আমরাই তো দাউ দাউ জ্বালিয়েছিলাম আগুন
তোর মনে নেই ? দাঁড়া, এবারও তোকে
শিখিয়ে দেবো ফের কী করে শুকনো গাছেও
জন্ম দিতে হয় অমন উজ্জ্বল সুন্দর গাঢ় সবুজ পত্রালি!
সময় তুই একটু দাঁড়া তো ভাই; অতো তাড়া করিস না
আমি তৈরী হয়ে নি ।
পরিধেয় বস্ত্র
পরিধেয় সমস্ত বস্ত্রের ভাঁজ একে একে
খুলে তোমাকে দেখাতে হবে আজ
এই সব সুউচ্চ মূল্যের রঙচঙ
বাহারী কোর্তার ভেতরেও
আমরা সকলে সমান নগ্ন ।
আর এ নগ্নতা মানুষের অন্তিম গন্তব্য বলে
যে বিস্তৃত কথা তুমি লিখে রাখো রোজ
নির্ভুল বানানে; এখানে সেখানে
কাগজে দেয়ালে পোস্টারে ও
সুগভীর ভাবনায়,
আমরা তার অলজ্জ প্রমাণ পেলে
স্বপক্ষেও দ্বিধাহীন মেনে নেবো
এইসব দ্যূতিদায়ী কেতাবী পোষাক
নয় আর মোটেও সমান পরিধেয় ।
নারায়নগঞ্জ
আনিসুর রহমান অপু
প্রথার প্রতাপ ভেঙে
নূপুরের নিবেদন লেখা ছিলো প্রথম দেখায়
কিশোরী সরণ ছুঁয়েছিলো চাঁদের মুগ্ধতা
জংলাপাড় শাড়ির নক্সায় ঢাকা ছিলো পায়ের আদর।
সে ছিলো উন্মোচনের উৎসমুখ, সুখকর জলে
উষ্ণ নিঃশ্বাসের খুব কাছে এসেও ছোঁয়নি
ঠোঁটের লাবণ্য। নিভৃত নাভীর চাঁদ সম্ভাব্য শুক্লায়
ছড়াবে ঈদের খুশি। এমনকি শিহরিত স্তনে
পড়েনি দাঁতের দাগ। ধূসর বরণ
পোনা মাছের সাঁতার বাকী রয়ে গেছে আরো।
অথচ খরায় ভরাকটালের তেষ্টা নিয়ে
দিন গুনছিলো অপেক্ষার দীঘি। দূর বুভূক্ষু হৃদয়
উষর ধূসর মরুগিরিপথ বেয়ে
ছুঁয়েছিলো নদীর বাসনা।
জলের বৈভব নিয়ে সে আসে, সে আসে জলে
দূরান্তের সমুদ্দুরে দুঃসহ নির্জনতার গন্ধ ধুয়ে।
নিউইয়র্ক
পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়
বাড়ি ফিরে যাবার তাড়া
বাড়ি ফিরে যাবার তাড়া
ম্যাটাডরে এক এক করে উঠে পড়লো
চারিদিকে সন্ধ্যার প্রলেপ শুরু হচ্ছে
খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে স্মৃতি
ট্র্যাফিক সিগন্যালে অকস্মাৎ প্রবল ঝাঁকুনি
শ্মশান ফেরত একদল মানুষ আকাশে বাতাসে
শরীর পোড়া গন্ধ নিয়ে জীবাশ্ম প্রেমিক মুখোমুখি
জ্বালা-ধরানো অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা এবং নিভৃত শান্তি
শৈশবের মতন নিঃঙ্গতা জড়িয়ে গেলো
জীবনের কোণায় কোণায়;
ভূলুণ্ঠিত অহংকার পুড়ে ছাই
তীক্ষ্ণ বিদ্বেষ রাগ হিংসা পুড়ে ছাই
বিষাদের আঁতুড়ঘর আঁতাতের স্বরলিপি
প্রতিবাদের মানচিত্র পুড়ে ছাই
বিনিময়ের সৌজন্য টুকুও পুড়ে ছাই
হয়ে গেলো...
বালিগ্রাম
অমিতাভ দাশগুপ্ত
পুনর্জন্ম
কাল তোমাকে দেখলাম
কফি হাউসে
এক সুদর্শন যুবকের সঙ্গে;
তোমার হাতে কফির কাপ
হেসে হেসে কথা বলছো
যুবকটির ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট।
সেই আগুনে আস্তে আস্তে
আমার সমস্ত সত্তা
পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।
মৃত্যুর পর আর কিছুই থাকেনা।
পড়ে থাকে একমুঠো ছাই
পুনর্জন্মের আশায়।
টেক্সাস
আশিস দাস
আত্মকথন
মাঝে মাঝে মনে হয়
বড় ধূসর এ পরিক্রমা, কোনো উত্তরণ নেই।
প্রবাহের অভিমুখে পা রেখে কুড়িয়ে আনি
একরাশ বিষণ্নতা।
বর্ধমান
|
|